অ্যানেসথেটিস্ট

যে কোন ধরনের সার্জারি অথবা সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে কিছু সময় অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রবেশ করার প্রয়োজন হয় রোগীকে ঘুম পাড়ানোর জন্য কিংবা অচেতন করতে। একজন অ্যানেসথেটিস্ট সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সার্জারির পূর্বে রোগীকে অচেতন করতে। এছাড়াও স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছেন কিংবা হৃদযন্ত্রে স্টেন্টিংসহ শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একজন অ্যানেসথেটিস্ট প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে থাকেন।

একজন অ্যানেসথেটিস্ট কোথায় কাজ করেন?

সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন অ্যানেসথেটিস্ট কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই অ্যানেসথেটিস্ট নিযুক্ত থাকেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত একটি অংশ হওয়ায় বেশ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন অ্যানেসথেটিস্টের কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে –

১। যে কোন সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল।

২। যে কোন মেডিকেল কলেজ (সরকারি ও বেসরকারি উভয়)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

৪। যে কোন বেসরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতাল।

৫। সার্জারির জন্য বিশেষায়িত ইন্সটিটিউট বা হাসপাতাল।

একজন অ্যানেসথেটিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?

অ্যানেসথেটিস্ট হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে –

১। যে কোন সার্জারির পূর্বে রোগীকে অচেতন করা শরীরে অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রবেশ করানোর মাধ্যমে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, অচেতন করা ছাড়া কোন ধরনের অপারেশন, সার্জারি বা শল্যচিকিৎসা সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই এই বিষয়ে একজন অ্যানেসথেটিস্ট অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।

২। যে কোন সমস্যায় আক্রান্ত রোগী ব্যথায় কাতর হলে ব্যথা প্রশমনের জন্য অ্যানেসথেটিকস প্রবেশ বা প্রয়োগ করতে হয় শরীরে।

৩। হৃদযন্ত্রে ব্লক সমস্যার সমাধানে স্টেন্টিং-এর সময় শরীরের নিচের অংশ, বিশেষ করে যে কোন একটি পা অ্যানেসথেটিকস প্রয়োগের মাধ্যমে অবশ করতে হয়।

৪। অর্থোপেডিক সার্জারি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে হাত, পা অথবা শল্যচিকিৎসার জন্য বিবেচ্য অঙ্গ অবশ করার জন্য অ্যানেসথেটিকস প্রয়োগ করতে হয়।

৫। সার্জারির সময় রোগী যাতে কোন ধরনের সমস্যা বা ব্যথা অনুভব না করেন তা নিশ্চিত করতে রোগীর শরীরে অ্যানেসথেটিকস প্রয়োগ করতে হয়।

৬। স্নায়বিক সমস্যার ক্ষেত্রে সমস্যার আপাতকালীন সমাধান হিসেবে কিংবা স্নায়ুতে অথবা মস্তিষ্কে ব্যথা প্রশমন বা রোধের জন্য অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রয়োগের কাজ করতে হয় একজন অ্যানেসথেটিস্টকে।

৭। অবসটেট্রিক বা ধাত্রীবিদ্যার যে কোন ব্যথা প্রশমনের কাজে অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রয়োগের কাজ করতে হয় একজন অ্যানেসথেটিস্টকে।

৮। সংশ্লিষ্ট অপারেশন বা সার্জারির সার্জনের সাথে কথা বলে এবং তার নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রয়োগ করতে হয়।

৯। সার্জারির পরে আপনার ব্যথা প্রশমনের জন্য কাজ করেন একজন অ্যানেসথেটিস্ট।

১০। এছাড়াও একজন অ্যানেসথেটিস্ট রোগীর রক্তচাপ, হার্টবিট এবং কিডনিসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সচল ও সুস্থ আছে কিনা সে বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন।

একজন অ্যানেসথেটিস্টের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই অ্যানেসথেটিস্ট হওয়া যায় না। বরং অ্যানেসথেসিওলজি বিষয়ের উপর বিশেষায়িত ডিগ্রি থাকলেই কেবলমাত্র আপনি অ্যানেসথেটিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে অ্যানেসথেসিওলজি বিষয়ে এমডি, এফসিপিএস, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি অ্যানেসথেটিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া অ্যানেসথেসিওলজি বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া অ্যানেসথেটিস্ট হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

একজন অ্যানেসথেটিস্টের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। নিয়োগের পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা চিকিৎসাশাস্ত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব সরাসরি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।

২। যে কোন অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশকের বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এক্ষেত্রে একজন অ্যানেসথেটিস্টকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে কোনভাবেই চেতনানাশকের পরিমাণ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি না হয়ে যায়।

৩। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণ অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে কোনরকম ঝুঁকি বা হেলাফেলা করে যাবে না এবং সর্বোচ্চ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

৪। সব ধরনের সার্জারির ক্ষেত্রে একই ধরনের চেতনানাশক প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে সবধরনের চেতনানাশক নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি।

৫। অনেক সময় অ্যানেসথেটিকস বা চেতনানাশক প্রয়োগের ফলে স্নায়বিক সমস্যা তৈরি হতে পারে কিংবা স্মৃতিবিলোপের মত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন কেউ কেউ। এ ধরনের সমস্যায় যাতে আক্রান্ত না হন কেউ এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এই সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞান থাকতে হবে।

একজন অ্যানেসথেটিস্টের মাসিক আয় কেমন?

আপনি যদি একজন অ্যানেসথেটিস্ট হন সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে মাসিক সম্মানীর পরিমাণ বাংলাদেশে বেশ ভালো। বেসরকারি ক্ষেত্রে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে শুরুর দিকে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হতে পারে ৮০০০০ টাকা থেকে।  সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে দুই লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। তবে বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ীএক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে।

কোথায় পড়বেন অ্যানেসথেশিওলজি?

এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে বাংলাদেশে বিসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস) থেকে অ্যানেসথেসিওলজি বিষয়ের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যানেসথেসিওলজি বিষয়ের উপর বিভিন্ন গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রি যেমন – ডিপ্লোমা, এমডি প্রভৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।

একজন অ্যানেসথেটিস্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

যে কোন হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন অ্যানেসথেটিস্টস্টের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –

১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট

সিনিয়র কনসালট্যান্ট

এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্টসাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালের জন্যই তা প্রযোজ্য।

মেডিকেল কলেজ, যে কোন ইন্সটিটিউট এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে। নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন অ্যানেসথেটিস্টস্টের জন্য জরুরী।   

 

Leave a Comment