অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার

টারশিয়ারী প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব বেশি এগোতে না পারলেও বিমান বা উড়োজাহাজ চালনা ও প্রকৌশলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়েছে গত কয়েক বছরে। বেশ কিছু বেসরকারি যাত্রীবাহী বিমান সেবাদাতা কোম্পানির আগমন ঘটায় এক্ষেত্রে বিমান প্রকৌশলে পড়াশোনার ক্ষেত্রের যেমন সৃষ্টি হয়েছে নতুন করে, নিয়োগের জন্যও ক্রমাগত চাহিদা বেড়েছে বিমান প্রকৌশলে ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে এমন প্রার্থীদের।

এক নজরে একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার

সাধারণ পদবী: অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগ: তথ্যপ্রযুক্তি
প্রতিষ্ঠানের ধরন:সরকারি, প্রাইভেট এয়ারলাইন্স
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: মিড
অভিজ্ঞতা সীমা: প্রতিষ্ঠান সাপেক্ষে
বেতনসীমা: ৳৪০,০০০ – ৳৫০,০০০
সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২৬ – ৩৫ বছর
মূল স্কিল: বিমানের নকশা, ইঞ্জিনের খুঁটিনাটি, সতর্কতা বিধান এবং ঝুঁকি প্রশমনের ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা
বিশেষ স্কিল: সমস্যা সমাধানের দক্ষতা,বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন, ঝুঁকি নিবারণ

একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করেন?

  • সরকারি এয়ারলাইন্স বা যাত্রীবাহী বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে শুধুমাত্র বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সই একমাত্র সরকারি যাত্রীবাহী বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান;
  • বেসরকারি এয়ারলাইন্স বা যাত্রীবাহী বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। যেমন – ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ লিমিটেড, নভোএয়ার লিমিটেড, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রভৃতি;
  • যাত্রীবাহী বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ(CAAB)-এ কাজ করার সুযোগ আছে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে;
  • এর পাশাপাশি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীতে আপনি নিয়োগ পেতে পারেন অ্যারোনটিকাল বা অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে

একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার কী ধরনের কাজ করেন?

অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারের কাজ প্রকৃতপক্ষে সেক্টরভিত্তিক হয়। এক্ষেত্রে বিভাগ অনুযায়ী আপনাকে নিযুক্ত করা হয়। নিয়োজিত বিভাগ অনুযায়ী একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারের কাজ সাধারণত নিম্নরূপ হয়-

  • মেইনটেন্যান্স বা রক্ষণাবেক্ষণঃ এক্ষেত্রে আপনাকে লাইন ও হেভি বেজ মেইনটেন্যান্স অথবা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে আপনাকে বিমানের সব ঠিক আছে কিনা তা দেখতে হয় এবং বিমান উড্ডয়নের জন্য উপযোগী কিনা তা নিশ্চিত করতে হয়। যদি বিমানের ইঞ্জিন অথবা কারিগরি কোন সমস্যা থাকে এক্ষেত্রে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব আপনার উপর অর্পিত থাকবে;
  • প্রকৌশল পরিকল্পনা বা ইঞ্জিনিয়ারিং প্ল্যানঃ এক্ষেত্রে বাতাসে উড্ডয়নের জন্য ইঞ্জিন যথেষ্ট শক্তিশালী ও ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে কিনা সেই হিসাব কষতে হবে এবং ইঞ্জিনের সমস্যা রক্ষণাবেক্ষণের সময় অবগত করা হলে আপনাকে তার সমাধান দিতে হবে এক্ষেত্রে। এছাড়াও দুর্ঘটনা অনুসন্ধান, উড্ডয়নকালে বিমানের সমস্যা ও গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্ট বা যন্ত্রের ব্যাপারে আপনাকে জানতে হবে। অনেক ক্ষেত্রেই কোন দুর্ঘটনা অনুসন্ধানের দায়িত্ব আপনার কাঁধে অর্পিত হতে পারে;
  • কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্সঃ মেইনটেন্যান্স বিভাগ তাদের কাজ সম্পাদনের পরে কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স বিভাগের উপর দায়িত্ব বর্তায় মেইনটেন্যান্স কোম্পানির নিয়মমাফিক ও ম্যানুয়াল অনুযায়ী হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে ও নিশ্চিত করতে। যেহেতু বিমান শিল্প একটি টারশিয়ারী প্রযুক্তি যার ভরণপোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ খুবই ব্যয়বহুল এক্ষেত্রে তাই কোন ঝুঁকি নিলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রলয়ঙ্করী হতে পারে। এ কারণেই আসলে এই শিল্পে রক্ষণাবেক্ষণ ও বিমানের নিরীক্ষাকর্ম সম্পাদন করা হয় বেশ কয়েকটি ধাপে সবরকমের ঝুঁকি দূর করতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। সিএএবি ছাড়াও আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের ম্যানুয়াল ও নিয়ম অনুযায়ী বিমানের নিরাপত্তা ও ইঞ্জিনব্যবস্থা উপযুক্ত করাও এক্ষেত্রে কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্সের দায়িত্বে নিয়োজিত ইঞ্জিনিয়ারকে নিশ্চিত করতে হয়;
  • প্রোকিউরমেন্টঃ এক্ষেত্রে বিমান ক্রয় ও বিক্রয়ের বিষয়গুলো আপনাকে দেখাশোনা করতে হবে। কারিগরি বিষয়, ইঞ্জিন ক্রয় এবং বিমানের বিভিন্ন অংশ ক্রয়ের বিষয়ও এক্ষেত্রে আপনার হাতে ন্যস্ত থাকে;
  • নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষঃ যদি সিএএবি তে আপনি নিয়োগ পান সেক্ষেত্রে আপনি পরিদর্শক হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পাওয়া বেশ দুর্লভ একটি ব্যাপার। এখানে নিয়োগ পেলে আপনি বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিমান পরীক্ষা করবেন এবং তাদের লাইসেন্স অনুমোদনের দায়িত্ব আপনার উপর অর্পিত থাকবে। কোন রকমের নিয়মহীনতা অথবা অনিয়মের সন্ধান করা এবং সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াও এক্ষেত্রে আপনার হাতে ন্যস্ত থাকবে।

একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ আপনি যদি যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বা বিমানচালনা প্রকৌশল বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্ত হন তাহলে আপনি অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন প্রতিষ্ঠানগুলোতে। যদি সিএএবি-তে আপনি পরিদর্শক হিসেবে কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই বিমান প্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয়ে ৩ বছরের পূর্ব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হতে হবে। শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পেতে হলে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় না। যদি বিমানচালনা প্রকৌশল অথবা রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ে আপনার ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকে সেক্ষেত্রে আপনি বিমান মেকানিক বা নির্বাহী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন।

বয়সঃ প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত তা ২৫ থেকে ৩৫ বছর।

অভিজ্ঞতাঃ প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ

একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে চাইলে বিষয়বহির্ভূত জ্ঞান খুব একটা প্রয়োজন হয় না। যেহেতু বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বেশ ব্যয়বহুল এবং স্পর্শকাতর তাই সবক্ষেত্রেই আপনাকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিমানের কোন ক্ষতির জন্য কোনভাবে যদি আপনি দায়ী হোন সেক্ষেত্রে আপনার বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে এবং তা শুধুমাত্র আপনার ক্যারিয়ারের উপর বিরূপ প্রভাবই ফেলবে না বরং কোন কোন ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার একেবারে ধ্বংসও করে দিতে পারে;
  • বিষয়ভিত্তিক গভীর ধারণা থাকা এক্ষেত্রে জরুরি। বিমানের নকশা, ইঞ্জিনের খুঁটিনাটি, সতর্কতা বিধান এবং ঝুঁকি প্রশমনের ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক এক্ষেত্রে। বিমান প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা করলে তাই শুধুমাত্র কাগজে-কলমের জ্ঞান দিয়েই আপনার ক্যারিয়ার গড়া যায় না। যেহেতু সরাসরি নিজ দায়িত্বে ঝুঁকি নিবারণ নিশ্চিত করতে হয় তাই বাস্তবিক জ্ঞান থাকাও এক্ষেত্রে আবশ্যক;
  • এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগের জন্য একটি পরীক্ষা নেয় যেখানে আপনার বিমান প্রকৌশল বিষয়ের জ্ঞান পরীক্ষা ও যাচাই করা হয়। তাই বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান কম হলে চাকরিপ্রার্থীর ব্যর্থতা বেশ সাধারণ একটি ব্যাপার এক্ষেত্রে।

একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?

অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ হলেও সাধারণত মাসিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার। সিএএবি-তে কাজের ক্ষেত্রে মাসিক আয় সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে হয়।

একজন অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

এক্ষেত্রে ক্যারিয়ারের গ্রাফ প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। পদোন্নতি ও পদবিন্যাস প্রতিষ্ঠানের ধরন ও প্রতিষ্ঠানের আকারের উপর নির্ভর করে। তবে সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছরের মধ্যে একজন শিক্ষানবিশ ইঞ্জিনিয়ার লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেইনটেন্যান্স অফিসার হতে পারেন। সাধারণত ৮ থেকে ১২ বছরের মধ্যে প্রোকিউরমেন্ট ও কোয়ালিটি অ্যাস্যুরেন্স ইঞ্জিনিয়ার থেকে পদোন্নতি পাওয়া যায়। আপনার কাজের সাফল্যের উপর ভিত্তি করে সিনিয়র নির্বাহী থেকে শুরু করে ডেপুটি ম্যানেজার পদ পর্যন্ত পদোন্নতি হতে পারে।

Leave a Comment