কিউরেটর

কোন জাদুঘর/সংগ্রহশালায় প্রদর্শিত সামগ্রী ( প্রত্ন, শিল্প, কলা, বৈজ্ঞানিক ) সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে সেসবের যত্ন ও সংরক্ষণ করা, ইতিহাস অনুসন্ধান করা এবং প্রয়োজনীয় গবেষণার কাজ করে থাকেন একজন কিউরেটর বা তত্ত্বাবধায়ক। প্রদর্শিত বস্তু সংশ্লিষ্ট কাজের পাশাপাশি যাদুঘরের দাপ্তরিক কাজ, বিভিন্ন সভা-সেমিনার, শিক্ষামূলক কর্মসুচি, প্রচারণার দায়িত্ব একজন কিউরেটরের উপর বর্তায়।

এক নজরে একজন কিউরেটর

সাধারণ পদবী:আসিস্ট্যান্ট কিউরেটর/ অ্যাসিস্ট্যান্ট কীপার
বিভাগ:মিউজিওলোজি
প্রতিষ্ঠানের ধরন:জাদুঘর, সংগ্রহশালা, চিত্রশালা
ক্যারিয়ারের ধরন:ফুল টাইম
লেভেল:এন্ট্রি/মিড
অভিজ্ঞতা সীমা:সরাসরি কিউরেটর হতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পেশায় ৭/৮ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
সম্ভাব্য বেতনসীমা: সরকারি জাদুঘরে সহকারী কিউরেট/কীপার নবম গ্রেড অনুযায়ী ২২-৫৩ হাজার টাকা পান। কিউরেটর গ্রেড-৬ অনুযায়ী বেতন পান
সম্ভাব্য বয়সসীমা:সরকার নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরে চাকুরী আবেদনের বয়সসীমা ১৮-৩০ বছর। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর জন্য আবেদনের সর্বোচ্চ বয়স ৩২ বছর। অন্যান্য জাদুঘরগুলোতে নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই
মূল স্কিল:জাদুঘরে প্রদর্শিত বস্তু সম্পর্কিত তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান, প্রদর্শিত সামগ্রী সংরক্ষণ সম্পর্কিত জ্ঞান
বিশেষ স্কিল:জাদুঘরের প্রদর্শিত সামগ্রী সংশ্লিষ্ট গবেষণা পত্র, নির্বাহী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সেমিনার পরিচালনার দক্ষতা

একজন কিউরেটর কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা শিল্পে কাজ করেন?

একজন কিউরেটর মূলত সরকারি/বেসরকারি/ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে ওঠা জাদুঘর, সংগ্রহশালা, চিত্রশালা, আর্ট গ্যালারীতে কাজ করে থাকেন।

একজন কিউরেটর কী ধরনের কাজ করেন?

  • জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা;
  • প্রদর্শিত সামগ্রীর নিয়মিত রেকর্ড রাখা;
  • সংগ্রহিত সামগ্রী নিয়ে গবেষণা করা;
  • জাদুঘরের সংশ্লিষ্ট সামগ্রীর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা ও লেখালেখি করা;
  • জাদুঘরের বিভিন্ন নির্বাহী দায়িত্ব পালন, মন্ত্রণালয় কিংবা বিভিন্ন ফাউন্ডেশনের ব্যক্তিবর্গের সাথে সাক্ষাত;
  • বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনা সভা, প্রতিযোগিতা, শিক্ষামূলক প্রদর্শনী ও মেলায় আয়োজন করা;
  • অন্যান্য জাদুঘর এবং শিল্প-কলা-প্রত্ন-নৃ গবেষক ও সংগ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা;
  • জাদুঘরের নিজস্ব পত্রিকা/ম্যাগাজিন বের করা;
  • জাদুঘরের ফান্ড এর জন্য কাজ করা।

একজন কিউরেটরের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?

কিউরেটর হতে হইলে মিউজিওলজি বিষয়ে ডিগ্রী থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়ক শিক্ষার কোন সুযোগ নেই। জাদুঘর ও বিভাগের ধরন অনুযায়ী আলাদা শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে। যেমন জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে সহকারী কিউরেটর পদে আবেদনের জন্য বিজ্ঞানের যে কোন তাত্বিক বিষয়ে অন্তত স্নাতকোত্তর ও প্রকৌশল বিষয় গুলোর ক্ষেত্রে স্নাতক ডিগ্রী থাকতে হবে। আবার জাতীয় জাদুঘরের বিভিন্ন বিভাগের সহকারী কিপার পদের জন্য নৃবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ব, সমাজবিজ্ঞান, ইতিহাস, ফোকলোর ইতিহাস, ইসলামী ইতিহাস বা বিজ্ঞানের যে কোন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী থাকতে হবে। বেসরকারি বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরিচালিত জাদুঘর গুলোর কিউরেটর হতে চাইলে সামাজিক বিজ্ঞানের যে কোন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী ও একাধিক গবেষণা পত্র থাকতে হয়।

একজন কিউরেটরের কী কী দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাত্ত্বিক ও বাস্তব উভয় জ্ঞান থাকতে হবে;
  • এক বা একাধিক গবেষণা পত্র থাকতে হবে;
  • জাদুঘরে ভিন্ন ভিন্ন বস্তু সামগ্রী সংরক্ষণ পদ্ধতি জানতে হবে;
  • জাদুঘর ব্যবস্থাপনা ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৈচিত্রময় জাদুঘর সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে;
  • রুটিন ওয়ার্ক এর পাশাপাশি সভা, সেমিনার, শিক্ষামূলক কর্মসুচি গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে;
  • মাঠ পর্যায়ে কাজ করে জাদুঘরের জন্য প্রদর্শন সামগ্রী সংগ্রহের ব্যাপারে আগ্রহ থাকতে হবে;

কোথায় পড়াশোনা করবেন কিউরেটর হতে চাইলে?

কোথায় পড়াশোনা করবেন কিউরেটর হতে চাইলে?
বাংলাদেশের প্রায় সকল সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ গুলোতে সমাজবিজ্ঞান, বিজ্ঞানের বিভিন্ন তাত্ত্বিক বিষয়, ইতিহাস পড়ার সুযোগ আছে। প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে থাকে।
নৃতত্ত্ব পড়তে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যেমন ব্র্যাক, সান্ত-মারিয়াম, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ আছে।

একজন কিউরেটরের কাজের ক্ষেত্র ও সুযোগ কেমন?

বাংলাদেশে মোট ১০৩ টি জাদুঘর আছে (উইকিপিডিয়া , বাংলাপিডিয়ার তথ্য মতে ৮০ টির অধিক যা কিনা অনেক আগের এবং নির্দিষ্ট নয় ) । জাতীয় জাদুঘরের অধীনে ৪ টি , প্রত্নতত্ব অধিদপ্তরের অধীনে ১৭ টি জাদুঘর আছে যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর, শিশু একাডেমির অধীনে শিশু জাদুঘর, বাংলাদেশ ব্যাংক এর অধীনে টাকা জাদুঘর, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সহ বেসরকারি, বিভিন্ন ফাউন্ডেশন, সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য জাদুঘর গড়ে উঠেছে। সরকারি নিয়ন্ত্রিত জাদুঘর গুলোতে সরাসরি নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সহকারী কিউরেটর হিসেবে কাজের সুযোগ আছে। বেসরকারি ও সায়ত্বশাসিত জাদুঘর গুলোতে কিউরেটর হতে চাইলে যোগ্যতার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।

ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন কিউরেটরের?

সরকারি বিভিন্ন জাদুঘরে সহকারী কিউরেটর/কীপার হিসেবে যোগাদান করতে হয়। ৫/৬ বছর এ পদে কাজ করলে যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুযায়ী কিউরেটর হওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক একটি সম্মানজনক পদ। এছাড়া বিভিন্ন গবেষণামূলক কাজে পরবর্তিতে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব। সরকার যদি দক্ষ ও যোগ্য মনে করে তবে কিউরেটরের পদ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিশেষত সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অন্যান্য পদে কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা

মুমিনুর রশীদ, সহকারী কিউরেটর, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর

Leave a Comment