ডার্মাটোলজিস্ট: চর্মরোগ চিকিৎসক

ত্বকসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন সাধারণত একজন ডার্মাটোলজিস্ট। অন্যান্য সকল সমস্যার মত ত্বকসংক্রান্ত সমস্যাও বাংলাদেশে বেশ জটিল হিসেবেই ধরা হয়। তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একজন ডার্মাটোলজিস্টের চাহিদা বেশ ভালো।

একজন ডার্মাটোলজিস্ট কোথায় কাজ করেন?

সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন ডার্মাটোলজিস্ট কাজ করতে পারেন সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই ডার্মাটোলজিস্ট নিযুক্ত থাকেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত একটি অংশ হওয়ায় বেশ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন ডার্মাটোলজিস্টের কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে –

১। যে কোন সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল।

২। ত্বকসংক্রান্ত সমস্যার জন্য বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতাল বা ইন্সটিটিউট ও প্রতিষ্ঠান। যেমন – কবির ন্যাশনাল স্কিন সেন্টার, ড. ঝুমু খান’স লেজার মেডিকেল, কামাল স্কিন সেন্টার, ফেস অন কসমেটিক অ্যান্ড লেজার সেন্টার প্রভৃতি।

৩। যে কোন মেডিকেল কলেজ

৪। ডার্মাটোলজির উপর বিশেষায়িত কোন ইন্সটিটিউট বা প্রতিষ্ঠান

৫। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

একজন ডার্মাটোলজিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?

অর্থোপেডিক চিকিৎসক হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করা লাগবে –

১। ত্বকসংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দেওয়া।  

২। চর্মরোগের প্রতিকার দেওয়া।

৩। ত্বক কেটে গেলে এবং ত্বকের ইনফেকশনে যে কোন প্রকার মলম ও ওষুধ পরামর্শ দেওয়া।

৪। তিল ও অন্যান্য ত্বকসংক্রান্ত সমস্যার সার্জারি বা অপারেশন করা।

৫। অ্যালার্জি সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও প্রতিকার পরামর্শ দেওয়া।

৬। কিছু ক্ষেত্রে ভেনেরিওলজি বা যৌনরোগসংক্রান্ত সমস্যার পরামর্শ দিতে হয়।

৭। ত্বকের সমস্যার সমাধানে লেজার সহায়তা ও সার্ভিস প্রদান করা।

৮। হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বা মাথায় চুল প্রতিস্থাপনের কাজ সম্পন্ন করা।

একজন ডার্মাটোলজিস্টের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই ডার্মাটোলজিস্ট হওয়া যায় না। বরং ডার্মাটোলজি বিষয়ের উপর বিশেষায়িত ডিগ্রি থাকলেই কেবলমাত্র আপনি ডার্মাটোলজিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে ডার্মাটোলজি বিষয়ে এমডি বা এমএস, এফসিপিএস, এমডি, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি ডার্মাটোলজিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া ডার্মাটোলজি বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া ডার্মাটোলজিস্ট হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। তবে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান প্রমাণ করতে পারলে অভিজ্ঞতা কোন মুখ্য বিষয় নয় নিয়োগের প্রয়োজনে। শুরুতেই সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে সাধারণত ৩ বছরের পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।

কিছু প্রতিষ্ঠানে একজন ডার্মাটোলজিস্টকে ব্যবসায়িক কাজে  নিয়োগ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে এমবিবিএস ডিগ্রির বাইরে আর কিছু প্রয়োজন না হলেও ৩ থেকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্য চিকিৎসাশাস্ত্রের কোন কাজ করা প্রয়োজন হয় না বরং আপনার কাজ হবে পুরোপুরি সেলস ও ব্যবসায়িক প্রসারভিত্তিক এবং অনেক ক্ষেত্রেই ২৮ থেকে ৩৫ বছরের একটি বয়সসীমার কথা উল্লেখ করা থাকতে পারে।

একজন ডার্মাটোলজিস্টের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। নিয়োগের পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা চিকিৎসাশাস্ত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব সরাসরি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।

২। অ্যালার্জি ও ত্বকের ধরন নিয়ে গভীর ধারণা থাকতে হবে।

৩। অ্যান্টিবায়োটিক এবং মলম নিয়ে যথার্থ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে মলম খুব স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই কোন রোগের ক্ষেত্রে কী ধরনের মলম ব্যবহার করতে হবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরি।

৪। ত্বকের রোগ প্রতিকারে প্রতিনিয়ত নতুন মলমের আবির্ভাব ঘটে এবং এক্ষেত্রে নিয়মিত জ্ঞান আহরণ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার বিষয়।

৫। তিল অপসারণ এবং ত্বকে অন্য কোন সার্জারির ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতার ব্যাপারে জ্ঞান থাকা জরুরি।

৬। লেজার সার্জারি ও সার্ভিসের ব্যাপারে বিশেষ পারদর্শিতা থাকা জরুরি।

একজন ডার্মাটোলজিস্টের মাসিক আয় কেমন?

আপনি যদি একজন ডার্মাটোলজিস্ট হন সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে মাসিক সম্মানীর পরিমাণ বাংলাদেশে বেশ ভালো। সাধারণত অভিজ্ঞতা ব্যতীত নিয়োগ পেলে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে শুরুর দিকে আপনার মাসিক সম্মানী হবে ২০০০০ টাকা থেকে ৪০০০০ টাকার মত। অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের মাসিক সম্মানী শুরু হয় ৫০০০০ টাকা থেকে। সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে দুই লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। কনসালট্যান্ট পদে নিযুক্ত ব্যক্তিদের সাধারণত মাসিক এক থেকে দুই লাখ টাকা সম্মানী দেওয়া হয়ে থাকে।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ীএক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে। আপনি আলাদাভাবে নিজের চেম্বারে রোগী দেখার ব্যবস্থা রাখলে সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় আরও বেশি হবে যেহেতু ত্বকসংক্রান্ত সমস্যা বাংলাদেশের মানুষদের খুবই নিয়মিত একটি শারীরিক সমস্যার বিষয়। তবে ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে আয়ের বিষয়টি আপনার খ্যাতি ও নামের প্রসারের উপর নির্ভরশীল।

একজন ডার্মাটোলজিস্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

বেসরকারি খাতে একজন ডার্মাটোলজিস্টের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –

১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট

২। সিনিয়র কনসালট্যান্ট

এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্টসাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন।

মেডিকেল কলেজ, ডার্মাটোলজির বিশেষায়িত ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে (কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে) আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে। নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন ডার্মাটোলজিস্টের জন্য জরুরী।   

কোথায় পড়বেন ডার্মাটোলজি?

এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডার্মাটোলজি বিষয়ের উপর ডিপ্লোমা, এমসিপিএস এবং অন্যান্য উচ্চশিক্ষার ডিগ্রিগুলো লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ডার্মাটোলজি বিষয়ের উপর এই গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রিগুলো দেওয়া হয়ে থাকে।

 

 

Leave a Comment