ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার

কলকারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অগ্নিপ্রতিরোধ সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা নকশা তৈরির কাজের জন্য একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। সর্বজনীন হিসাবে এটি বেশ প্রচলিত একটি ক্যারিয়ার হলেও বাংলাদেশের জন্য ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার পদটি বেশ নতুন। কলকারখানায় শ্রমিকদের প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার মান অত্যন্ত নিম্নমানের হওয়ায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের আবির্ভাব ঘটে বাংলাদেশে যারা ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিয়ে থাকে কলকারখানার নিরাপত্তা নকশা তৈরি করার লক্ষ্যে।

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করেন?

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারকে সাধারণত নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেখা যায় –

১। কলকারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, অগ্নিপ্রতিরোধ সক্ষমতা এবং নিরাপত্তা নকশা তৈরির প্রতিষ্ঠান।

২। কারখানাগুলো আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে মেনে চলার মাধ্যমে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশে এমন প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ হল অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্স। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কারখানার কাঠামো তৈরির কাজে বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করে থাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মজবুত করতে।

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার কী ধরনের কাজ করেন?

১। নতুন এবং পুরাতন কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার নকশা ও পরিকল্পনা তৈরি করা।

২। পুরাতন কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কাঠামোগত নকশা ত্রুটিপূর্ণ কিনা তা খেয়াল করা।

৩। শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কারখানাতে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও ব্যবস্থা উপস্থিত আছে কিনা তা পরীক্ষা করা।

৪। কোন ধরনের অনিয়ম এবং অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্রেতামহলকে তা জানানো এবং প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করা। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠানটিকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ ও কাজ সম্পাদন করতে পারেন একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার।

৫। কারখানা ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কাঠামোর নকশা তৈরি করতে হয়।

৬। নিয়মিত কলকারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার রেকর্ড রাখতে হয়। শ্রমিকেরা কোন প্রকার বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারে নিয়মিত খেয়াল রাখতে হয়।

৭। কারখানার যন্ত্রপাতি ঠিক আছে এবং পরিবেশবান্ধব কিনা তা পরিদর্শনের কাজ সম্পাদন করতে হয় একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারকে।

৮। কোন দুর্ঘটনার পরে তার কারণ অনুসন্ধান করতে হয় এবং ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হয়।

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

১। ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে চাইলে যন্ত্রকৌশল বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হয়।

২। নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতা সাধারণত বাধ্যতামূলক নয়। তবে ১ থেকে ২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের সাধারণত প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে নিয়োগের ক্ষেত্রে।

৩। নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ বছরের একটি বয়সসীমা উল্লেখ করা থাকে।

৪। এক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ নিয়োগের ব্যাপারে কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। অগ্নিনির্বাপণ, অগ্নিপ্রতিরোধ ও কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থার নকশা ও কাঠামো তৈরির ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে।

২। অটোক্যাড, ম্যাটল্যাবসহ বিভিন্ন সফটওয়্যারের কাজ জানতে হবে।  

৩। যন্ত্রকৌশলের প্রাথমিক জ্ঞান এবং এ সংক্রান্ত পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

৪। কারখানার কাজ ও যন্ত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যাপারে গভীর ধারণা থাকা জরুরি।  

৫। আন্তর্জাতিক শ্রম আইন ও ব্জাতীয় বিল্ডিং কোডের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ধারণা থাকতে হবে।  

৬। শিল্প-কারখানার আন্তর্জাতিক মানদন্ড ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের উপস্থিতি বিষয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে।

৭। কারখানায় যে ধরনের দুর্ঘটনা সংঘটিত হতে পারে সেগুলোর ব্যাপারে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে।

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার সাধারণত পদোন্নতির মাধ্যমে প্রথমে সিনিয়র ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার এবং পরবর্তীতে ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পেতে পারে।

একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?

এক্ষেত্রে মাসিক আয়ের বিষয়টি প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। সাধারণত একজন ফায়ার ইঞ্জিনিয়ার মাসিক আয় ৩০০০০ টাকা থেকে ৪০০০০ টাকা হয়।

 

Leave a Comment