ফিজিক্যাল ট্রেইনার

শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রি আছে, এমন ব্যক্তিদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে ফিজিক্যাল ট্রেইনার বলা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক হিসেবেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে যদি আপনি কলেজ বা কলেজ ধরনের কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পান তাহলে আপনার পদবিন্যাস হবে একজন কলেজ প্রভাষকের মতই একইরকম।

এক নজরে একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনার

সাধারণ পদবী: ফিজিক্যাল ট্রেইনার
বিভাগ: শরীরচর্চা ও খেলাধুলা
প্রতিষ্ঠানের ধরন:সরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ২ – ৩ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বেতনসীমা: ৳১৬,০০০ – ৳৩০,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২৬ – ৩০ বছর
মূল স্কিল:শরীরচর্চা বিষয়ক জ্ঞান, পুষ্টি ও ডায়েট সংক্রান্ত জ্ঞান
বিশেষ স্কিল: শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগের দক্ষতা

একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনার কোথায় কাজ করেন?

ফিটনেস ট্রেইনার সাধারণত নিম্নলিখিত ক্ষেত্রগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে –

  • বিভিন্ন স্কুল বা বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ফিজিক্যাল ও অ্যাথলেটিক প্রশিক্ষণের জন্য। এক্ষেত্রে স্কুল বলতে কিন্ডারগার্টেন থেকে শুরু করে প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উচ্চ বিদ্যালয় – সবগুলোই প্রযোজ্য;
  • বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোতে আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্রিকেট, ফুটবল ও বাস্কেটবলসহ যাবতীয় ক্রীড়া কর্মকাণ্ড ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করার জন্য;
  • বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ প্রশিক্ষণের জন্য আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রীড়া কর্মকাণ্ড ব্যবস্থাপনা আপনার প্রাথমিক দায়িত্বের মধ্যে পড়বে। বিভিন্ন খেলার কৌশল ও শারীরিক শিক্ষায় বিভিন্ন উপকারি ব্যায়াম-এর কৌশল আপনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে নির্দিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীদের।

একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনার কী ধরনের কাজ করেন?

  • শারীরিক শিক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণের যাবতীয় তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনারের;
  • ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণের জন্য আপনাকে শারীরিক সুস্থতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা ও শিক্ষা বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য ও জ্ঞান দিতে হবে;
  • শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় অনুশীলন আপনাকে ঠিক করে দিতে হবে। কী ধরনের রিদম বা নাচের মাধ্যমে আপনি প্রশিক্ষণ পরিচালনা করবেন তা ঠিক করে রাখতে হবে আপনাকে;
  • শ্রেণীকক্ষের বাইরে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে আপনাকে। এক্ষেত্রে সাধারণত সপ্তাহের কোন নির্দিষ্ট একটি দিন আপনার জন্য বরাদ্দ করা থাকবে;
  • শিক্ষার্থীদের ক্রীড়া কর্মকাণ্ড আপনার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করা লাগবে। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদেরকে নির্দিষ্ট একটি খেলায় প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া, কৌশল শেখানো এবং ক্রীড়া কর্মকাণ্ডে ভালো করার তাগিদ দিতে হবে আপনাকে;
  • শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসচেতন জীবন নির্বাহের জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে হবে;
  • শিক্ষার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলতে শিখাতে হবে এবং আচরণবিধি মেনে না চললে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে আপনাকে। পাশাপাশি পরবর্তীতে তারা যাতে আচরণবিধি ও আচার-ব্যবহার সম্পর্কিত বিষয়গুলো জানতে পারে ও সেগুলো মেনে চলে – এই বিষয়টির খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে;
  • প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শারীরিক বৃদ্ধির বিষয়ে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে এবং কেউ কোন অসুবিধায় ভুগছে কিনা তা আপনার জানতে হবে।

একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনার কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ ফিজিক্যাল ট্রেইনারদেরকে সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয় সাধারণত জুনিয়র শিক্ষক, শিক্ষক অথবা সহকারী শিক্ষক পদে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দিতে দেখা যায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

সহকারী শিক্ষক অথবা ফিজিক্যাল ট্রেইনার হিসেবে কাজ করতে গেলে প্রাথমিক যোগ্যতার বিষয় আপনার সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি আছে কিনা। অর্থাৎ আপনার যদি শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ব্যাচেলর তথা বিপিএড(BPEd) অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকে সেক্ষেত্রে আপনি ফিজিক্যাল ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে মাস্টার্স বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি(MPEd বা এমপিএড)-ও প্রয়োজনীয় হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে জুনিয়র ফিজিক্যাল ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী ব্যক্তিদেরও নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সামরিক বাহিনী অথবা বিজিবিতে কাজ করেছেন এবং প্যারেডে পারদর্শী হলে আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে সহকারী শিক্ষক হিসেবে।

বয়সঃ এ ক্ষেত্রে বয়সসীমা নির্দিষ্ট না থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে তা বলা থাকতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সাধারণত অনূর্ধ্ব ৪০ বছর নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকতে পারে। নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ আলাদা করে সাধারণত উল্লেখ করা থাকে যেহেতু পুরুষ শিক্ষার্থীদের জন্য পুরুষ প্রশিক্ষক এবং নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নারী প্রশিক্ষক প্রয়োজন হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের কথা আলাদা করে উল্লেখ করা না-ও থাকতে পারে।

অভিজ্ঞতাঃসহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে চাইলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পূর্ব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগের বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন না হলে নিয়োগ দেওয়া হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে এক বছরের অভিজ্ঞতা প্রয়োজনীয় হতে পারে।

একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • পুষ্টি ও ডায়েট নিয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে;
  • ব্যায়াম, অনুশীলন ও কার্যকরী প্রশিক্ষণ নিয়ে জানতে হবে এবং তার প্রয়োগ প্রশিক্ষণে নিশ্চিত করতে হবে;
  • শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য – এই বিষয়ে গভীর ধারণা থাকা জরুরী;
  • শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনায় পারদর্শী হতে হবে।

একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনারের মাসিক আয় কেমন?

ফিজিক্যাল ট্রেইনার বা সহকারী শিক্ষকের ক্ষেত্রে বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। সাধারণত একজন সহকারী শিক্ষককে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী মাসিক ১৬০০০ টাকা থেকে ৩৮৬৪০ টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধি হবে বার্ষিক হিসাব বৃদ্ধি অনুযায়ী। আবার কিছু ক্ষেত্রে মাসিক সম্মানী ১৬০০০ টাকা থেকে ২০০০০ টাকা হতে পারে। সেক্ষেত্রেও মাসিক সম্মানী পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাবে।

একজন ফিজিক্যাল ট্রেইনারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

এখানে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। তবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়ো পেলে আপনার পদবিন্যাস হবে স্কুল বা কলেজের শিক্ষক পদবিন্যাসের মতই। এক্ষেত্রে সহকারী শিক্ষক থেকে পদোন্নতি পেয়ে আপনি সিনিয়র শিক্ষক(স্কুল) অথবা প্রভাষক(কলেজ) পদে উন্নীত হতে পারবেন। প্রভাষকের পরে সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পর্যন্ত আপনি পদোন্নতি পেতে পারেন কলেজগুলোর ক্ষেত্রে।

Leave a Comment