ভিডিও ইন্ডাস্ট্রির কাজ

ভিডিও ইন্ডাস্ট্রির কাজকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগটি হচ্ছে ভিডিও ধারণ এবং এসংলগ্ন কাজ। আরেকটি ভাগ হচ্ছে ভিডিওর সম্পাদনা এবং তৎসংলগ্ন  কাজ। আর্টিকেলটিতে ভিডিও ইন্ডাস্ট্রির এই দুই অংশের কাজ নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।

প্রথম ভাগ

প্রথম ভাগটি সম্পূর্ণভাবে ভিডিও ধারণের সময়কার কাজ। ভিডিও করা, সাউন্ড নেওয়া প্রভৃতি।

স্ক্রিপ্ট : ভিডিওর স্ক্রিপ্টকে ভিডিওর গঠনও বলা যায়। পরিচালক কিংবা অভিনেতারা তাদের কাজ সম্পর্কে ভিডিওটির স্ক্রিপ্ট দেখেই ধারণা পান। তাই, স্ক্রিপ্ট লেখার সময় যে বিষয়কে কেন্দ্র করেই লেখা হোক না কেন, সেসম্পর্কে একটি ভালো ধারণা থাকতে হবে। ভিডিওর প্রতি মিনিটে কী হবে তা স্ক্রিপ্টেই নির্ধারণ করা থাকে। সবশেষে সফলতার সাথে দৃশ্যগুলো সাজাতে হবে। তবেই, স্ক্রিপ্টটি পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

ক্যামেরার কাজ: বিভিন্ন দূরত্ব ও আ্যঙ্গেল থেকে শ্যুট নিয়ে যেকোন সিনেমার সাধারণ একটি দৃশ্যকে অসাধারণ করে তোলা যায়। নদীর পাড়ের একটি দৃশ্য, পাহাড়ের চূড়া কিংবা সূর্যাস্ত কিংবা যেকোন দৃশ্যই অসাধারণ হয়ে যেতে পারে বিভিন্ন দূরত্ব ও আ্যঙ্গেল থেকে শ্যুট নিয়ে।

সাউন্ড: আমরা অনেকেই ভিডিও শ্যুটের সময় সবচেয়ে অগ্রাহ্য করি যে বিভাগটাকে, তা হলো সাউন্ড। পরিচালক ড্যানি বয়েলের মতে, সিনেমার সত্তর থেকে আশি শতাংশই সাউন্ডের উপর ভিত্তি করে তৈরি। ভালো সাউন্ড টেক করতে হলে বুম মাইক ব্যবহার করতে হয়। তাহলে, সাউন্ড তুলনামূলকভাবে অনেক বেশী নয়েজ ফ্রী হয়।

লাইট: লাইট শটের ডাইমেনশন তৈরিতে সাহায্য করে। ভালোভাবে আলোক প্রক্ষেপণ করতে পারলে, তা সিনেমার চেহারা যেমন ঘুরিয়ে দিতে পারে; তেমনিভাবে পারে গল্পের আবেদন বাড়িয়ে দিতে। দিনের বেলা পর্যাপ্ত আলোতে শ্যুট করলে ভিডিওতে নয়েজ কম থাকে। অপরদিকে রাতের বেলা ভিডিওতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকলে নয়েজ এর পরিমাণ অনেকগুণ বেড়ে যায়। আলোকে বাউন্স করতে ককশিট ব্যবহার করা যায়; যা ক্যামেরার সামনের মানুষের দিকে আলোকে বাউন্স করে নিয়ে তাকে আরো বেশি আলোকিত করে তুলবে।

এতো গেলো শ্যুটিংয়ের আগের ব্যাপার- স্যাপার।

দ্বিতীয় ভাগ

এরপর আসে পোস্ট প্রোডাকশনের অংশ। পোস্ট প্রোডাকশন বলতে আমরা অনেকে শুধুমাত্র ভিডিও সম্পাদনা ভাবলেও বিষয়টি আসলে তা নয়। বিশেষ করে সিনেমাতে সাউন্ড ফোলি, ডাবিং, ভিএফএক্স, স্কোর সিলেক্ট করা, এসবই পোস্ট প্রোডাকশনের মধ্যে পড়ে।

সাউন্ড ফোলি:

এখনকার বেশির ভাগ সিনেমাতে যত রকমের খুঁটিনাটি শব্দ বা ডায়ালগ থাকে তার সবটুকুই পোস্ট প্রোডাকশনে যোগ করা হয়। যেমন ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা গাড়ির হর্ন বা দরজায় কারো কড়া নাড়া বা হাঁটার সময় জুতোর আওয়াজ,  এরকম ছোটোখাটো য্ত শব্দ সিনেমায় থাকে, তার পুরোটাই ভিডিও শুটের পরে ফোলি আর্টিস্টরা স্টুডিওতে রেকর্ড করে। খুব কম মডার্ন ফিল্মেই রিয়েল লোকেশনের শব্দ সিনেমাতে ব্যবহার করে থাকে ডিরেক্টরেরা। একেই বলে ফোলি।

ডাবিং:

তারপর আছে ডাবিংয়ের অংশ। এক্ষেত্রে সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা রেকর্ডিং স্টুডিওতে তাদের ডায়লগুলো পুনরাবৃত্তি করে, যাতে সিনেমাতে পরিষ্কারভাবে তা শোনা যায়। এজন্যই আমরা ফোনে যেসব ভিডিও করে কথাবার্তা বলি সেগুলো সিনেমার ডায়লগের মতো ভালো শোনায় না।

ভিএফএক্স বা  সিজিআই:

এছাড়া ভিএফএক্স (ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস) বা সিজিআইয়ের (কম্পিউটার জেনারেটেড ইমেজ) এর মাধ্যমে সিনেমাতে অনেক কিছু যোগ-বিয়োগ করা যায়। একটা খুব সাধারণ দেখতে সবুজরঙা স্ক্রিনের সামনে দাড়িয়ে করা ভিডিওকে বিশাল এক জগত বানিয়ে ফেলা যায়। এসব কিছুর পরে আসে ভিডিও সম্পাদনার অংশ। সম্পাদনা সিনেমার অবিচ্ছেদ্য এক অংশ। ভালো সম্পাদনা যেমন একটা বাজে শ্যুটকেও অসাধারণ বানিয়ে ফেলতে পারে, তেমন বাজে সম্পাদনা পারে তাকে অখাদ্য বানাতে। ভিডিওর অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিয়ে কাহিনী অনুযায়ী ভিডিওর টাইমলাইন তৈরি করে যথাসম্ভব আকর্ষণীয় করে তোলাই একজন সম্পাদকের কাজ।

এছাড়া রয়েছে কালার কারেকশন, ভিডিও ট্রাঞ্জিশন, ভিডিও ও অডিও এর মধ্যে ইকুইটি ব্যালেন্সসহ অনেক খুঁটিনাটি কাজ। কালার কারেকশনের মাধ্যমে শ্যুট করা ভিডিওর মধ্যে ‘সিনেম্যাটিক লুক’ আনা সম্ভব হয়। ভিডিও ট্রাঞ্জিশন ফিল্মে খুব একটা ব্যবহার না করলেও সাধারন ভিডিও এডিটিংয়ে অনেক কাজে আসে। মূলত এক সিনারিও থেকে অন্য সিনারিওতে জাম্পকাট করতে গেলে অনেক সময় ভিডিও ট্রাঞ্জিশনের শরণাপন্ন হতে হয়।

এমন নানা ধরনের কাজ নিয়েই গঠিত ভিডিও ইন্ডাস্ট্রি।

2 thoughts on “ভিডিও ইন্ডাস্ট্রির কাজ”

    • আপনি ক্যামেরা চালানোর উপর কোন ট্রেনিং নিয়েছেন কি?

      Reply

Leave a Comment