মেকআপ আর্টিস্ট

কসমেটিকস এবং মেকআপ সামগ্রী নিয়ে ভালো ধারণা থাকলে মেকআপ আর্টিস্ট বা বিউটি কনসালট্যান্ট হিসেবে ক্যারিয়ার বেছে নেওয়া হতে পারে আপনার জন্য সঠিক একটি সিদ্ধান্ত। মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেলে মেকআপ বা সাজসজ্জার কাজ করতে হয় সাধারণত। বিউটি কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ পেলে সাজসজ্জার বাইরেও সাধারণত কিছু কাজ করা লাগে যা মেকআপ আর্টিস্টের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া সাধারণত বর্তায় না।

এক নজরে একজন মেকআপ আর্টিস্ট

সাধারণ পদবী: মেকআপ আর্টিস্ট, বিউটি কনসালট্যান্ট
বিভাগ: রূপচর্চা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সিং
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, পার্ট টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বেতনসীমা: ৳৮০০০ – ৳১৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: প্রযোজ্য নয়
মূল স্কিল: রূপচর্চা সংক্রান্ত জ্ঞান, রূপচর্চায় ব্যবহৃত দ্রব্যের সঠিক ব্যবহার জানা
বিশেষ স্কিল: সৃজনশীলতা, যোগাযোগের দক্ষতা

একজন মেকআপ আর্টিস্ট কোথায় কাজ করেন?

  • বাংলাদেশে বর্তমানে নিক্স, কালারপপ, ওয়েট অ্যান্ড ওয়াইল্ডসহ বেশ কিছু কোম্পানীর কসমেটিকস সামগ্রী বিক্রয় করা হয় বিভিন্ন অনলাইন সার্ভিসের মাধ্যমে এবং মেকআপ সামগ্রীর দোকানে। বিউটি কনসালট্যান্ট বা মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে এক্ষেত্রে আপনি অনলাইন সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা শুধুমাত্র মেকআপ সামগ্রী বিক্রয় করে এবং এজন্য ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করে এমন প্রতিষ্ঠান বা দোকানগুলোতে কাজ করতে পারেন;
  • তবে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ধরনের প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বিউটি পার্লার। বিউটি পার্লারগুলোতেও বিউটি কনসালট্যান্ট পদে নিয়োগ দেওয়া হয় যেখানে মেকআপ আর্টিস্ট থেকে বিউটি কনসালট্যান্ট-এর কাজ কিছুটা আলাদা হয়। এক্ষেত্রে বিউটি কনসালট্যান্ট-কে সবসময় সরাসরি সাজসজ্জা বা মেকওভারের কাজ করা না লাগলেও কিছু ক্ষেত্রে তা করা লাগতে পারে;
  • কসমেটিকস সামগ্রী আমদানী করে এবং তা অনলাইন সার্ভিস বা দোকানের মাধ্যমে বিক্রয় করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ক্রেতাদের কসমেটিকস সামগ্রী গুলো পরীক্ষা করতে দেন সেই পণ্যটি তাদের সাথে খাপ খাচ্ছে কিনা দেখার জন্য। এই পণ্য পরীক্ষার ক্ষেত্রে মেকআপ আর্টিস্ট বেশ বড় ভূমিকা পালন করেন;
  • অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলে একজন মেকআপ আর্টিস্ট নিজের বিউটি পার্লার অথবা মেকওভার প্রতিষ্ঠান শুরু করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিগত যশ ও খ্যাতি একটি বড় বিষয়।

একজন মেকআপ আর্টিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?

  • আপনি যদি শুধুমাত্র মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে নিয়োগ পান সেক্ষেত্রে আপনাকে মেকওভার বা সাজসজ্জার কাজ বাধ্যতামূলকভাবে করা লাগবে এবং সেক্ষেত্রে আপনার ক্যারিয়ারের বিশেষত্বের জায়গাও হবে সেটি। মেকআপ আর্টিস্ট হলে কসমেটিকস ও কার জন্য কেমন সাজসজ্জা করতে হবে সে ব্যাপারে ভালো ধারণা থাকা জরুরী;
  • বিউটি কনসালট্যান্ট এবং মেকআপ আর্টিস্ট – দুই ক্ষেত্রেই আপনাকে মানুষের ত্বক সম্পর্কে জানতে হবে। কোন ক্রেতার জন্য কোন ধরনের কসমেটিকস এবং মেকওভার ভালো হবে সেটা জানার দায়িত্ব আপনার উপর বর্তাবে এক্ষেত্রে;
  • ক্রেতাদেরকে তাদের পছন্দসই এবং তাদের জন্য ভালো এমন কসমেটিকস সামগ্রী পরামর্শ দিতে হয়।

একজন মেকআপ আর্টিস্ট কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ বিউটি কনসালট্যান্ট বা মেকআপ আর্টিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে ধরাবাধা কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা সাধারণত লাগে না। এক্ষেত্রে বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক ডিগ্রি আছে এমন কাউকে নিয়োগ দিতে আগ্রহী থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছু ক্ষেত্রে মাধ্যমিক বা ও লেভেল এবং উচ্চমাধ্যমিক বা এ লেভেল পাস করেছেন এমন যোগ্যতাও নিয়োগের সময় উল্লেখ করা থাকে।

বয়সঃনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন বয়সসীমা দেওয়া না থাকলেও কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ বছর বয়সের কথা উল্লেখ থাকতে পারে। বাংলাদেশে এই ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত মেকআপ বা বিউটি বিষয়ে পড়াশোনা করা বাধ্যতামূলক নয় কারণ এমন শিক্ষাগত যোগ্যতা বা ডিগ্রি আছে মানুষের সংখ্যা দেশে খুব বেশি নয়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাকে সাধারণত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হয়।

অভিজ্ঞতাঃ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে সাধারণত নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা কমপক্ষে ১ বছর বলা হয়ে থাকে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৪ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক থাকে। সাধারণত ৩-৪ বছরের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে এমন নারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

একজন মেকআপ আর্টিস্টের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • কসমেটিকসের ক্ষেত্রে নতুন পণ্যের আনাগোনা বেশ সাধারণ একটি ব্যাপার। সেক্ষেত্রে একজন মেকআপ আর্টিস্ট বা বিউটি কনসালট্যান্টকে নতুন পণ্যগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হয় এবং নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হয়;
  • মানুষের ত্বকের ধরন নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা বেশ জরুরী। একজন ক্রেতার জন্য কোন ধরনের পণ্য ভালো হবে সে ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকা গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্রেতাকে সে অনুযায়ী পরামর্শ দেওয়া বেশ জরুরী;
  • কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্যের গায়ে যে ধরনের তথ্যগুলো দেওয়া থাকে তা পড়ে বুঝতে পারার ক্ষমতা থাকতে হবে;
  • যেসকল পণ্য বিক্রয় করা হচ্ছে সেগুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হয় এবং মেকওভারের ক্ষেত্রে একজন ক্রেতাকে কী ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে সে ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা দিতে হয়। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট এবং অন্য যে কোন উপায়ে কোন পণ্যের ধরন কেমন, কোন পণ্য কোন ক্ষেত্রে সাধারণত ব্যবহৃত হয় সে ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে;
  • তরল বা লিকুইড ভিত্তিক মেকওভার নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে;
  • ইতিবাচক মানসিকতার হতে হবে;
  • বিউটি কনসালট্যান্টের ক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব পণ্য বিক্রয় করার একটি বিষয় থাকে। এক্ষেত্রে ক্রেতার সাথে ভালো যোগাযোগ ক্ষমতা থাকতে হবে;
  • মেকওভারের ক্ষেত্রে ক্রেতা তার চাহিদামত মেকওভার পাচ্ছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার দায়িত্ব একজন মেকআপ আর্টিস্টের। এক্ষেত্রে ক্রেতার সাথে কথা বলা জরুরী এবং ক্রেতার চাহিদাও বুঝতে হয়।

একজন মেকআপ আর্টিস্টের মাসিক আয় কেমন?

এক্ষেত্রে মাসিক সম্মানীর বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। মেকআপ আর্টিস্টের কাজ নির্দিষ্ট এবং তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এই পদের জন্য মাসিক সম্মানীর পরিমাণ সাধারণত কম হয়। বিউটি কনসালট্যান্ট হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের সাধারণত পণ্যের কাটতি বাড়ানো, ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ সমন্বয়, পণ্য বিক্রয়ের পাশাপাশি মেকওভার করার কাজও সম্পাদন করতে হয়। বিউটি কনসালট্যান্টের মাসিক আয় তাই সাধারণত বেশি হয়। বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ হলেও একজন বিউটি কনসালট্যান্ট সাধারণত মাসে ২০ হাজার টাকার মত সম্মানী পেয়ে থাকেন। একজন মেকআপ আর্টিস্ট সাধারণত মাসে ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন, যদিও বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।

একজন মেকআপ আর্টিস্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

মেকআপ আর্টিস্টের ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট পদবিন্যাস নেই বরং বিষয়টি একেবারেই প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেলে কিছু সময় পরে পদোন্নতি পেয়ে সাধারণত সিনিয়র মেকআপ আর্টিস্ট এবং পরবর্তীতে সহকারী পার্লার ম্যানেজার ও সর্বোচ্চ পার্লার ম্যানেজার হিসেবে আপনি কাজ করতে পারেন। বিউটি কনসালট্যান্টের ক্ষেত্রে সাধারণত পদবিন্যাসের পরের পদগুলো হয় – সিনিয়র বিউটি কনস্যালট্যান্ট, অফিস এক্সিকিউটিভ, সিনিয়র অফিস এক্সিকিউটিভ, সহকারী ব্যবস্থাপক এবং ব্যবস্থাপক বা জেনারেল ম্যানেজার।

যারা বেশ কিছুদিন মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেন তারা প্রায় ৬-৭ বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের পার্লার প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। এক্ষেত্রে শুরুতে হয়তোবা আপনাকে কিছুটা কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে, তবে কাজের মান ভালো হলে কিছু সময় পরে হয়তোবা আপনার প্রতিষ্ঠানও দেশের পার্লার বা বিউটি ইন্ডাস্ট্রিতে একটি বড় নাম হতে পারে। বর্তমানে বিদেশ থেকে কসমেটিকস পণ্য আমদানী করে এমন নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে রয়েছে এবং নতুন অনেকেই এক্ষেত্রে ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করছেন। ভালো মনে হলে এ ধরনের উদ্যোগও নিতে পারেন কেউ কেউ।

Leave a Comment