শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থা: বাংলাদেশে কাজ করছেন কারা?

শিক্ষা যেকোন দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। এ খাতের উন্নয়ন ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। এর জন্য সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি প্রয়োজন বেসরকারি উদ্যোগের। আমাদের দেশের শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থা ও কর্মসূচিগুলো ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। সেগুলোকে নিয়ে এবারের লেখা।

বাংলাদেশে শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন, এমন ৫টি বড় সংস্থা হচ্ছে –

  • আশা (ASA)
  • ব্র্যাক (BRAC)
  • সেভ দ্য চিলড্রেন (Save the Children)
  • দিশা (DISA)
  • টিচ ফর বাংলাদেশ (Teach for Bangladesh)

শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থাঃ আশা

আশা মূলত প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের জন্য কাজ করে। এক্ষেত্রে তাদের কর্মসূচির নাম ‘পিইএসপি’ (Primary Education Strengthening Program)।

পিইএসপির অংশ হিসেবে আশার রয়েছে ১০,৬০০টি শিক্ষাকেন্দ্র। প্রতিটি শিক্ষাকেন্দ্রে একজন করে শিক্ষা-সেবিকা আছেন। তারা প্রতি সপ্তাহের ৬ দিন ২ ঘন্টা করে ২৫-৩০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ক্লাস নেন। এ শিক্ষাকেন্দ্রের সবগুলোই দেশের অনগ্রসর অঞ্চলসমূহে অবস্থিত। আশার এ কর্মসূচির অধীনে বর্তমানে প্রায় ৩০০,০০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। উল্লেখ্য যে, প্রতি ১৫টি শিক্ষাকেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে একজন সুপারভাইজার নিয়োজিত রাখে আশা।

বিস্তারিত জানার জন্য যান আশা অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে

শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থাঃ ব্র্যাক

শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ব্র্যাকের কর্মক্ষেত্র আশার মতো শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষায় সীমাবদ্ধ নয়। শিশুর মানসিক বিকাশে সুবিধার জন্যও সংস্থাটি কিছু কাজ করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্র্যাকের ৩টি স্তর ভাগ করা আছে – ক) প্রাক শৈশব উন্নয়ন কেন্দ্র খ) প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র ও গ) প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র।

ব্র্যাক বাংলাদেশের বাইরে এশিয়া ও আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের ৮টি দেশে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নের ক্ষেত্রে কাজ করে। এ পর্যন্ত ব্র্যাকের স্কুলগুলো থেকে সাফল্যের সাথে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করা শিশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। বর্তমানে স্কুলগুলোতে অধ্যয়নরত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।

বিস্তারিত জানার জন্য যান ব্র্যাক অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে

শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থাঃ সেভ দ্য চিলড্রেন

শিক্ষা খাতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সেভ দ্য চিলড্রেনের লক্ষ্য জাতিসংঘ ঘোষিত ৪ নং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সম্পর্কিত। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ৪ সকল শিশুর জন্য মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলে। ২০৩০ সালের মধ্যে এ লক্ষ্য অর্জন করার কথা।

শিশুর প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাক-শৈশব বিকাশের উপর কাজ করার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ সেভ দ্য চিলড্রেন। সংস্থাটি ১৯৮৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় সর্বপ্রথম প্রাক শৈশব পরিচর্যা ও উন্নয়নের প্রজেক্ট শুরু করে প্লে-গ্রুপ শিক্ষা শুরুর মাধ্যমে।

শিক্ষা বিষয়ক সেভ দ্য চিলড্রেনের কয়েকটি প্রজেক্টের নাম হলো – শিখন, শিশুদের জন্য, রিডিং এনহান্সমেন্ট ফর অ্যাডভান্সিং ডেভেলপমেন্ট (READ) ও শিশুর ক্ষমতায়ন। সংস্থাটির অধীনে প্রায় ৬০০ জন স্টাফ কাজ করেন।

সেভ দ্য চিলড্রেনের ২০১৬-১৮ সালের চাইল্ড সেফগার্ডিং পলিসি বা সিএসপিতে শিশু শিক্ষার বিষয়টি বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়নের সময় প্লে-গ্রুপ তথা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে সংস্থাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিস্তারিত জানার জন্য যান তাদেরসেভ দ্য চিলড্রেনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে

শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থাঃ দিশা

বাংলাদেশে বেসরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে দিশা একটি অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত নাম হলেও শিক্ষার ক্ষেত্রে এর অবদান অসামান্য। দিশা পরিচালিত দিশা ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বা ডিআইএসটি কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে তরুণসমাজের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করে। এক্ষেত্রে ডিআইএসটি’র দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে – একটি ঢাকার মিরপুরের পল্লবীতে, অপরটি কুমিল্লায় (তথ্যসূত্রঃ ডিআইএসটি ওয়েবসাইট)।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিশা টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউট বা ডিটিটিআই ৪৮৯ জনকে বিভিন্ন কারিগরি ক্ষেত্রে ২-৩ মাসের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এদের মধ্যে ৩২৪ জনের সাফল্যের সাথে কর্মসংস্থান হয়েছে (তথ্যসূত্রঃ ডিটিটিআই ওয়েবসাইট)।

দিশার আরো কিছু প্রজেক্টের মধ্যে রয়েছে – আলোঘর (পাঠাগার, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং বৃত্তিসহ আরো বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান) ও ৮ম হতে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য ১৫০০/= মূল্যের বৃত্তি প্রদান।

বিস্তারিত জানার জন্য যান দিশার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে

শিক্ষা খাতে উন্নয়ন সংস্থাঃ টিচ ফর বাংলাদেশ

টিচ ফর বাংলাদেশ সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের গুণগত শিক্ষা দেবার উপর কাজ করে। এজন্য সংস্থাটি এমন মানুষদের নিয়োগ দেয় যারা প্রাথমিক শিক্ষাসহ বাংলাদেশের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী বিষয়গুলোতে খুব ভালো ধারণা রাখেন।

টিচ ফর বাংলাদেশে কাজের জন্য যারা চুক্তিবদ্ধ হন, তাদেরকে ফেলো বলা হয়। এ ফেলোশিপটি একটি পূর্ণ মেয়াদের কাজ। ২৬ মাসের জন্য প্রত্যেক ফেলোকে একটি মাসিক সম্মানীর ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৬৫ ঘন্টা অথবা তার বেশি সময় শিশুদের শিক্ষাদানে নিযুক্ত থাকেন ফেলোরা।

বিস্তারিত জানার জন্য যান তাদের টিচ ফর বাংলাদেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ Nurunnaby Chowdhury/CC BY-SA 4.0

Leave a Comment