সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্টের পার্থক্য

শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা ডাক্তারের পরামর্শ ও চিকিৎসা নিই। একইভাবে অনেক সময় মনের চিকিৎসারও দরকার রয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসায় সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্ট দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পেশার নাম। আপাতদৃষ্টিতে এদেরকে অভিন্ন পেশা হিসাবে মনে করা হয়। অথচ এদের কাজের ক্ষেত্র ও ধরন আলাদা। সাইকোলজিস্ট ও সাইকিয়াট্রিস্টের পার্থক্য নিয়ে জেনে নেয়া যাক এবার।

১. শিক্ষাগত যোগ্যতা

সাইকোলজিস্টদেরকে মেডিকেল স্কুলে লেখাপড়া করতে হয় না। এ পেশায় আসতে হলে আপনাকে সাইকোলজি বিষয়ে স্নাতক আর স্নাতকোত্তর পড়ার পর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করতে হবে ফিলোসফি অথবা সাইকোলজি, উভয় বিষয়েই, পিএইচডি করতে পারেন একজন সাইকোলজিস্ট।

একজন সাইকিয়াট্রিস্টকে অন্য ডাক্তারদের মতো মেডিকেল স্কুল থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর ডিগ্রি (ডক্টর অফ মেডিসিন) অর্জন করতে হয়। অর্থাৎ, অন্য সব ধরনের ডাক্তারদের মতো আপনাকে শারীরবৃত্তীয় সকল কার্যক্রমের চিকিৎসা সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে।

২. কর্মক্ষেত্র

একজন সাইকোলজিস্ট বিশেষায়িত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারেন। সাইকিয়াট্রিস্টের মতো মেডিকেল শিক্ষায় প্রশিক্ষিত না হবার কারণে তাকে সাইকোলজিক্যাল টেস্টের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হয়।

সাইকিয়াট্রিস্টরা ক্লিনিক্যাল চিকিৎসার জন্য পেশাদারি দায়িত্ব পালন করেন। রোগীর সার্বিক মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য দায়িত্ব নেন তারা। প্রয়োজনে রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন টেস্টের ব্যবস্থাও করতে পারেন।

৩. ঔষধ প্রদানের ক্ষমতা

একজন সাইকোলজিস্ট কোন ব্যক্তির মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যাবার সুপারিশ করতে পারেন। কিন্তু ঔষধের প্রেসক্রিপশন দেয়ার জন্য সাইকোলজিস্টের কোন লাইসেন্স নেই।

রোগীর মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে ঔষধ প্রদানের এখতিয়ার রাখেন একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। এর জন্য তার লাইসেন্স থাকে।

৪. কাজের ধরন

সাইকোলজিস্ট আর সাইকিয়াট্রিস্ট – দুইজনই রোগীর চিকিৎসায় কাজ করতে পারেন। মূলত কোন সাইকোলজিস্টের সুপারিশের ভিত্তিতে একজন রোগী সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে আসেন। সাধারণত সাইকোলজিস্টরা সাপ্তাহিক বা মাসিক ভিত্তিতে রোগীকে থেরাপি সেশনের মাধ্যমে মানসিক চিকিৎসা দেন।

রোগীর মানসিক রোগ সারানোর জন্য একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দীর্ঘ সময় ধরে রোগীর সাথে কাজ করেন। এক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ দেন ও টেস্ট করান।

৫. রোগভেদে প্রাধান্য

দুইটি পেশার উদ্দেশ্যই মানসিক চিকিৎসা হলেও সাইকিয়ট্রিস্টরা তুলনামূলকভাবে জটিল রোগ নিয়ে কাজ করেন। শুধুমাত্র অন্য কোন ডাক্তারের সুপারিশের মাধ্যমে তাদের কাছে চিকিৎসা নেয়া সম্ভব।

সাইকোলজিস্টের কাছে চিকিৎসা নেবার জন্য অন্য কোন ডাক্তারের সুপারিশের দরকার হয় না। মানসিকভাবে অস্থির বোধ করলেই তার সাহায্য নেয়া যায়। তুলনামূলক কম জটিল মানসিক রোগ নিয়ে কাজ করেন তিনি।

সাইকোলজিস্ট আর সাইকিয়াট্রিস্ট – দুইটি পেশাই সমান গুরুত্ব বহন করে। মানব মনের গতি প্রকৃতি এবং সম্ভাবনা বোঝার জন্য উভয় পেশায় রয়েছে বিস্তর গবেষণার সুযোগ। তাদের মূল লক্ষ্য একটাই – রোগীর মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।

আরো জানুন

– সাইকোলজিস্ট হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে দেখে নিন একজন সাইকোলজিস্টের ক্যারিয়ার প্রোফাইল

– সাইকিয়াট্রিস্ট হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে দেখে নিন একজন সাইকিয়াট্রিস্টের ক্যারিয়ার প্রোফাইল

Leave a Comment