হেপাটোলজিস্ট

পিত্তনালী, গল ব্লাডার ও যকৃতের রোগ ও সমস্যা নির্ণয়ের এবং সমাধানের কাজ করেন একজন হেপাটোলজিস্টকিছু ক্ষেত্রে একজন গ্যাস্ট্রোয়েন্টেরোলজিস্টের সাথে কাজ মিলে গেলেও বর্তমানে হেপাটোলজিস্টকে সাধারণত ভিন্ন একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। যকৃতের সমস্যা জটিলতর প্রমাণিত হওয়ায় যকৃতের উপর বর্তমানে চিকিৎসাশাস্ত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে এবং এ কারণেই হেপাটোলজি বিভাগের আলাদা প্রসার ঘটছে সবখানে।

একজন হেপাটোলজিস্ট কোথায় কাজ করেন?

সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন হেপাটোলজিস্ট কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই হেপাটোলজিস্ট নিযুক্ত থাকেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত একটি অংশ হওয়ায় বেশ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন হেপাটোলজিস্টের কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে –

১। যে কোন সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল।

২। যকৃতের সমস্যার জন্য বিশেষায়িত সরকারি, বেসরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল বা ইন্সটিটিউট ও প্রতিষ্ঠান। যেমন – ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন, গ্যাস্ট্রো-লিভার হসপিটাল প্রভৃতি।

৩। যে কোন মেডিকেল কলেজ (সরকারি ও বেসরকারি উভয়)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

একজন হেপাটোলজিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?

হেপাটোলজিস্ট হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে –

১। লিভার বা যকৃতের সমস্যা নির্ণয় করেন সাধারণত একজন হেপাটোলজিস্ট।

বিলিয়ারি ট্র্যাক্ট এবং এর অন্তর্ভুক্ত গল ব্ল্যাডার অংশের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

পিত্তনালীর সমস্যা সনাক্ত করতে হয় এবং প্রয়োজনে পুনর্গঠনের সার্জারি সম্পন্ন করার পরামর্শ দিতে হয়

যকৃত প্রতিস্থাপন এবং প্রয়োজনে যকৃতের কিছু অংশ অপসারণ করতে হয় সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে।

গল ব্লাডারে পাথরের উপস্থিতি ও অন্যান্য সমস্যা সনাক্ত করতে হয়।

যকৃতের টিউমার সনাক্ত করতে হয়।

৭। হেপাটাইটিস রোগ সনাক্ত করতে হয়। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, হেপাটাইটিস রোগের বিভিন্ন টাইপ আছে এবং মোটামুটি সবগুলো টাইপই মানবদেহের জন্য প্রাণঘাতী ও ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে। তাই হেপাটাইটিস রোগের সমস্যা সনাক্ত করে জরুরি অবস্থায় চিকিৎসা করতে হবে।

৮। জন্ডিসে আক্রান্ত ব্যক্তির সুস্থতা লাভের পরে যকৃতের আকার বড় হয়ে গেছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়।

৯। যকৃত প্রতিস্থাপনের পরে রোগীদের নিয়মিত নজরে রাখতে হয় এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে হয়।

১০। লিভার সিরোসিস সনাক্ত করতে হয় একজন হেপাটোলজিস্টকে। এটি মরণঘাতী হতে পারে এবং একটি জটিল রোগ। এই রোগের চিকিৎসা একজন হেপাটোলজিস্টকে সম্পন্ন করতে হয়।

১১। ইআরসিপি (Endoscopic Retrograde Cholangio-Pancreatography) সম্পন্ন করতে হয় একজন হেপাটোলজিস্টকে যকৃত, গল ব্লাডার ও পিত্তনালীর সমস্যা সনাক্ত করতে।

একজন হেপাটোলজিস্টের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই হেপাটোলজিস্ট হওয়া যায় না। বরং হেপাটোলজি বিষয়ের উপর বিশেষায়িত ডিগ্রি থাকলেই কেবলমাত্র আপনি হেপাটোলজিস্ট হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে হেপাটোলজি বিষয়ে এমডি, এফসিপিএস, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি হেপাটোলজিস্ট হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া হেপাটোলজি বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া হেপাটোলজিস্ট হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

একজন হেপাটোলজিস্টের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। নিয়োগের পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা চিকিৎসাশাস্ত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব সরাসরি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।

২। পিত্তনালী এবং যকৃত নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

৩। পিত্তনালী এবং যকৃতের সমস্যা নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে ভালোমত জানতে হবে এবং রিপোর্ট বোঝার মত যথাযথ জ্ঞান থাকতে হয়।   

গল ব্লাডারে পাথর এবং যকৃতের সমস্যার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার ঝুঁকি না নেওয়া ভালো কারণ তা পরবর্তীতে বড় ও জটিল সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

হেপাটাইটিস রোগের যে টাইপগুলো আছে সেগুলো মরণব্যাধি বিধায় এ রোগগুলো নিয়ে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে এবং এই রোগগুলোতে আক্রান্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

৬। জন্ডিসের সমস্যার ক্ষেত্রে যত্নবান ও সতর্ক হওয়া জরুরি।

৭। যকৃত প্রতিস্থাপন ও লিভার সিরোসিস রোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে।

৮। ইআরসিপি বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

একজন হেপাটোলজিস্টের মাসিক আয় কেমন?

আপনি যদি একজন হেপাটোলজিস্ট হন সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের বেসরকারি ক্ষেত্রে শুরুর দিকে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৫০০০০ টাকা থেকেসময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে এক লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। তবে বিষয়টি একেবারেই কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ীএক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে।

একজন হেপাটোলজিস্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

যে কোন হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন হেপাটোলজিস্টের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –

১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট

সিনিয়র কনসালট্যান্ট

এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্টসাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালের জন্যই তা প্রযোজ্য।

মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে। নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন হেপাটোলজিস্টের জন্য জরুরী।   

কোথায় পড়বেন হেপাটোলজি?

এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে বাংলাদেশে বিসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস) থেকে হেপাটোলজি বিষয়ের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেপাটোলজি বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রিগুলো, যেমন – ডিপ্লোমা, এমডি প্রভৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।

 

Leave a Comment