তথ্য ও প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নয়নের ফলে পরিবর্তন আসছে কর্মক্ষেত্রেও। ধারণা করা হচ্ছে, আসন্ন যুগে বহু চাকরির অস্তিত্ব থাকবে না, বরং এগুলো চলে যাবে প্রযুক্তির দখলে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে কোন চাকরিগুলো হারিয়ে যাবার পথে? জেনে নেয়া যাক।
১. ক্যাশিয়ার: কিছুদিন পর এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হবে যখন কেনাকাটার পর দোকানে লাইনে দাড়িয়ে ক্যাশিয়ারের কাছে পেমেন্ট করার আর দরকার হবে না। মানুষ সেল্ফ চেকআউট যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে নিজের পেমেন্ট কারো সাহায্য ছাড়া নিজেই করে ফেলতে পারবে। সামনের দিনগুলোতে হয়তো আমরা তাই চাকরির এ পদটি আর দেখবো না।
২. সংবাদপত্র বিতরণের চাকরি: অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমগুলো আমাদের কাছে অনেক বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। যেকোন সংবাদ বিনামূল্যে সাথে সাথে পাওয়া, একসাথে অনেকগুলো পত্রিকা থেকে সংবাদ পড়তে পারা- এসবকিছুই অনলাইনে মানুষের সংবাদ পড়ার পরিমাণের গ্রাফকে করছে ঊর্ধ্বমূখী। আর তার উল্টোদিকে সংবাদপত্রের হার্ডকপি কেনার পরিমাণ দিনে দিনে হচ্ছে নিম্নমুখী। এমন একটি সময় আসবে যখন এমন মানুষের পরিমাণ বেশী হবে যারা আর বাসায় সংবাদপত্র সকালে উঠে পাবার জন্য অপেক্ষা করবে না। এভাবে অনলাইনে সংবাদ পড়ার সুবিধা বিলুপ্ত করে দিবে সংবাদপত্র বিতরণের পেশা।
৩. ট্যাক্সিচালক: বর্তমান সময়েই দেখা যাচ্ছে যে, রাইড শেয়ারিং আ্যপগুলো কত বেশি জনপ্রিয় হয়েছে। উবার,পাঠাও অ্যাপগুলো ব্যবহার করে মানুষ যাতায়াত করতে অনেক বেশি অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে। কিছুদিন পর হয়তো জীবিকা নির্বাহের জন্য আর ট্যাক্সিচালক কেউ না হয়ে, রাইড শেয়ারিং আ্যাপগুলোতে গাড়ি চালানোকেই বেছে নিতে চাইবে। এভাবেই হয়তো আসন্ন ভবিষ্যতে বিলুপ্তি ঘটবে ট্যাক্সিচালকের।
৪. ট্রাভেল এজেন্ট: ট্রাভেলিং এ সবারই চাওয়া থাকে নিজেরমতো করে স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারার। এই সুযোগটা যতটা না বেশী থাকে এজেন্সির মাধ্যমে গেলে, তার থেকে অনেক বেশী থাকে কোন ট্রাভেল ওয়েবসাইটের সাহায্য নিলে। ট্রাভেল এজেন্টগুলো যা করতে পারে, ওয়েবসাইট গুলো বলতে গেলে তার সবকিছুই পারে।সাথে বেশীরভাগ ট্রাভেল ওয়েবসাইটগুলো কোথায় কম খরচে ভালো ভাবে থাকা যাবে, কোথায় সবচেয়ে ভালো জিনিসগুলো পাওয়া যাবে সেগুলো সুপারিশ করে ট্রাভেলারকে এবং তুলনার মাধ্যমে পছন্দ করার সুযোগ দেয়। তাই, নিকট ভবিষ্যতে অস্তিত্ব না থাকার তালিকায় ট্রাভেল এজেন্সিও রয়েছে।
৫. টেলিমার্কেটার: ভেবে দেখুন, প্রতিদিন আমরা কী পরিমাণ রোবোকল রিসিভ করি! একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন সংখ্যাটা দৈনিক গড়ে ১টির বেশী। এই রোবোকল কিংবা ইন্টারনেট পাওয়ার্ড ফোন সিস্টেম এভাবে ধীরে ধীরে দখল করে নিচ্ছে টেলিমার্কেটার চাকরিটি।
৬. রেফারি: যে কোন ধরনের খেলায় আমরা বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারে রিভিউ পদ্ধতি দেখতে পাই, যা নিখুঁত ফলাফল এনে দেয় খেলাধুলায়। দক্ষতাপূর্ণ রেফারির সিদ্ধান্তের চেয়ে, এই প্রযুক্তির সিদ্ধান্ত বেশীরভাগ মানুষের কাছে অধিক বিশ্বস্ত। প্রযুক্তির আধুনিকায়নে এমন এক সময় সামনে আসবে যখন হয়তো রেফারি বলে আর কিছু থাকবে না। সম্পূর্ণ বিষয়টি হয়ে যাবে প্রযুক্তি নির্ভর।
৭. অ্যাসেম্বলি লাইন ওয়ার্কার: একটি রোবট যেরকম নিখুঁতভাবে কারখানায় অ্যাসেম্বলি লাইনে পণ্য অ্যাসেম্বল করতে পারে, একজন মানুষ সেভাবে পারে না। অনেক কারখানাতেই তাই এ কাজে রোবট ব্যবহার হচ্ছে, যা হয়তো সামনে অ্যাসেম্বলি লাইন ওয়ার্কার হিসেবে মানুষের চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বন্ধ করে দিবে।
৮. ট্রেন চালকের চাকরি: এ সেক্টরে বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহারে ট্রেন চালকদের অল্প কিছু নির্দেশনা দিতে হয় ট্রেন চালাতে। অটোমেটেড ট্রেনগুলো সামনের দিনগুলোতে কোন ধরনের চালক ছাড়াই চলবে, বর্তমানের গতানুগতিক ট্রেনের জায়গা দখল করে। ফলে, ট্রেন চালক বলে কিছু হয়তো সামনে আমরা আর দেখবো না।
৯. ডাক কর্মচারী: পূর্বে চিঠিপত্র আদানপ্রদান যে পরিমাণ জনপ্রিয় ছিলো, বর্তমানে তা অনেক হ্রাস পেয়েছে। মানুষ খুব সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে নিজেদের যোগাযোগ করে ফেলে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ই-মেইল। মূলত এটিই চিঠির জায়গা দখল করে নিচ্ছে।ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রসারে হয়তো ডাক কর্মচারীর চাকরি হয়তো ভবিষ্যতে পুরোটাই বিলুপ্ত হবে।
১০. টাইপিস্ট: বর্তমানে অ্যাপলের সিরি কিংবা গুগল নাউ-এর মাধ্যমে কথা বলে সেটিকে লেখায় রূপান্তর কিন্তু খুব সহজেই করা যায়। বড় বড় লেখা কষ্ট করে না লিখে মুখে বলেই সেটিকে লেখায় পরিণত করা যায়। এবং এগুলো কাজ করেও খুব নিখুঁত। নিকট ভবিষ্যতে তাই হয়তো আমরা মুদ্রাক্ষরিক বা টাইপিস্ট পদটি দেখতে পাবো না চাকরিতে।
তথ্যসূত্রঃ ইনকর্পোরেশন ম্যাগাজিন, মন্সটার, ফাইন্যান্সেস অনলাইন