অডিট কিংবা অডিটিং নিয়ে কাজ

অডিট কিংবা অডিটিং একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক ব্যাপারগুলোর একটি। অ্যাকাউন্টিংয়ে আগ্রহ ও দক্ষতা থাকলে আপনি এ ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। জটিল এ প্রক্রিয়ার পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা এখানে করা সম্ভব নয়। বরং পুরো প্রক্রিয়ার ব্যাপারে প্রাথমিক একটা ধারণা পাবেন এবারের লেখায়।

অডিট কী?

কোন আর্থিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজনীয় নীতিমালার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য পরিচালিত নিয়মমাফিক ও নিরপেক্ষ মূল্যায়নকে অডিট বলে। এ কাজের প্রক্রিয়া পরিচিত অডিটিং হিসাবে।

সরকারি, বেসরকারি ও প্রাইভেট – সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে অডিটিং পরিচালিত হয়।

অডিটিংয়ের উদ্দেশ্য কী?

  • প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী কতটুকু সঠিক, তা যাচাই করা;
  • রাষ্ট্রীয় আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার সাথে আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গতি পরীক্ষা করা;
  • প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হয়, সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া।

অডিট কত প্রকার?

অডিটরের ধরনের ভিত্তিতে এটি দুই প্রকার।

  • ইন্টারনাল অডিট, যা একটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অডিটররা পরিচালনা করেন;
  • এক্সটার্নাল অডিট, যা বাইরের কোন প্রতিষ্ঠানের অডিটররা পরিচালনা করেন।

উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে অডিট কয়েক প্রকার হতে পারে। বোঝার সুবিধার্থে এখানে বাংলাদেশ সরকারের মহা হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত অডিটকে উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক। এ কার্যালয় আমাদের দেশের সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অডিটিংয়ের দায়িত্বে রয়েছে। ২২টি খাতে তিন ধরনের অডিটিং পরিচালনা করা হয় এর মাধ্যমে –

  • কমপ্লায়েন্স অডিট/ফিন্যান্সিয়াল অডিট: পাবলিক সেক্টরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড আইন ও নিয়মনীতি ও চুক্তি (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অনুযায়ী সম্পাদিত হয়েছে কি না, তার মূল্যায়ন করা হয়।
  • পারফরম্যান্স অডিট: রাষ্ট্রীয় অর্থ ও সম্পদের সঠিক ও ন্যায্য ব্যবহার হচ্ছে কি না, তার মূল্যায়ন করা হয়।
  • ইনফরমেশন টেকনোলজি অডিট: সময়ের সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বর্তমানে তাই এ পুরো প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন করা হয়।

অডিটিংভিত্তিক কী কী পেশা রয়েছে?

আপনি যদি অডিটিং নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে পেশা বাছাইয়ের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যেমন:

এছাড়া, সরকারি প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করতে চাইলে বিসিএস অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস ক্যাডারে যাবার চেষ্টা করতে পারেন।

অডিটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে কোন ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন?

অডিটিংভিত্তিক যে পেশাতেই আপনি যান না কেন, কিছু ক্ষেত্রে আপনার দক্ষতা থাকা জরুরি। যেমন:

  • গাণিতিক হিসাব করার দক্ষতা;
  • পরিসংখ্যানভিত্তিক জ্ঞান;
  • আর্থিক বিবরণী তৈরি ও বিশ্লেষণে দক্ষতা;
  • মাইক্রোসফট এক্সেলসহ হিসাব সংরক্ষণ ও ডাটা অ্যানালিসিসের সফটওয়্যারে পারদর্শিতা;
  • আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির দক্ষতা;
  • খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দেবার দক্ষতা;
  • আর্থিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতি নিয়ে ভালো ধারণা;
  • বিচক্ষণতা ও কৌশলী মনোভাব।

অডিটিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে কোন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে?

শুধু অডিটিং নিয়ে আলাদা কোন স্নাতক বা মাস্টার্স ডিগ্রি নেই। তবে এ প্রক্রিয়ার প্রয়োজনীয় কাজগুলো শিখতে পারবেন এমন কিছু বিষয় হলো:

  • অ্যাকাউন্টিং
  • চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং
  • ইকোনমিকস
  • ফিন্যান্স
  • ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট

উপরের বিষয়গুলোতে সরাসরি ডিগ্রি বা কোর্স নেবার ব্যবস্থা রয়েছে আমাদের দেশে। যেমন: চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিংয়ে পড়াশোনার জন্য ইন্সটিটিউট অফ চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অফ বাংলাদেশ সহায়তা দিয়ে থাকে।

এ বিষয়ে আপনার আরো কোন প্রশ্ন রয়েছে কি? থাকলে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দিন। আপনাকে সাহায্য করার যথাসাধ্য চেষ্টা থাকবে আমাদের।

Leave a Comment