আয়কর আইনজীবী

আয়কর সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে সমাধানের জন্য যে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একজন আয়কর আইনজীবীর প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিয়োগের বাইরেও একজন আয়কর আইনজীবী নিজে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। তবে আয়কর সংক্রান্ত হিসাবরক্ষণ ও সমস্যা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ সাধারণ হওয়ায় আয়কর আইনজীবীর চাহিদা বাংলাদেশে অনেক।

একজন আয়কর আইনজীবী কোথায় কাজ করেন?

সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেই সাধারণত আয়কর আইনজীবীদের কাজ করতে দেখা যায়। তবে একজন আয়কর আইনজীবীকে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক, চুক্তিভিত্তিক আবার কেসভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হতে পারে সাময়িক বিবেচনায়। নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে সাধারণত একজন আয়কর আইনজীবী বেশ পরিচিত এবং প্রচলিত একটি পদ –

১। বিভিন্ন কর্পোরেট ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।

২। ব্যক্তিগত উদ্যোগ পরিচালনা করছেন এমন ব্যক্তি।  

৩। ব্যক্তিগত সম্পদের হিসাব নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন এমন ব্যক্তি।

৪। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা।  

৫। আয়কর নিয়ে সমস্যায় পড়েছে এমন কোন প্রতিষ্ঠান।

সাধারণত বড়ো আকারের সব প্রতিষ্ঠানেই একজন আয়কর আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে যেক্ষেত্রে তাকে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় ও ধার্য করসহ সামগ্রিক হিসাবরক্ষণের কাজের পাশাপাশি প্রয়োজনে আয়কর মামলায় প্রতিষ্ঠানের হয়ে লড়তে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আয়কর আইনজীবীর কাজ হয় মামলা ও চুক্তিভিত্তিক।

একজন আয়কর আইনজীবী কী ধরনের কাজ করেন?

১। আয়কর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেলে আয়কর সংক্রান্ত মামলা লড়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তির আয়-ব্যয়ের সামগ্রিক হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সম্পন্ন করতে হয়।

২। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরূদ্ধে আয়কর সংক্রান্ত মামলা বিশেষ করে আয়কর ফাঁকির মামলা হলে সে মামলা লড়াইয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে মামলা থেকে রেহাই পাওয়ার কাজে সহায়তা করতে হয়।

৩। আয়কর সংক্রান্ত অনিয়ম ধরা পড়লে সে ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে অবগত করতে হয়।

আয়কর সংক্রান্ত সকল সম্ভাব্য অনিয়মের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে অবগত করতে হয়।

প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টের কাজ সম্পন্ন করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বা ভলান্টিয়ার হিসেবে যারা নিয়োগ পান তাদের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের কাজ করতে হয়।  

৫। আয়কর সংক্রান্ত মামলা লড়ার ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ সমন্বয়, তথ্য বিনিময় ও ব্যবস্থাপনার কাজ করতে হয় একজন আয়কর আইনজীবীকে।

৬। ব্যক্তির আয়কর সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে হয়।     

৭। প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয়কর পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়।  

৮। আয়কর সংক্রান্ত অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত ও সরকার কর্তৃক গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলে সেক্ষেত্রে আপিলের কাজ ও পরবর্তীতে মামলা লড়ার কাজ করতে হয়।

একজন আয়কর আইনজীবীর কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

১। সাধারণত যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাববিজ্ঞান, আইন কিংবা ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয় আয়কর আইনজীবী হিসেবে। তবে শুধুমাত্র এ ডিগ্রি থাকলেই আপনি আয়কর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পাবেন না। বরং আয়কর আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনাকে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে আয়কর আইনজীবী লাইসেন্স প্রদানের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন উল্লিখিত বিষয়ে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই কেবল আয়কর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। যারা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেছেন তারাও আয়কর আইনজীবীর লাইসেন্সের পরীক্ষা দিতে পারেন।   

২। ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ কিংবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে ১ থেকে ২ বছরের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাওয়া যায়।

৩। আয়কর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত কোন নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই।

৪। আয়কর আইনজীবী হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত লিঙ্গভিত্তিক কোন বাধ্যবাধকতা নেই।  

একজন আয়কর আইনজীবীর কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। ক্লায়েন্ট ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দক্ষ ও বিচক্ষণ হতে হবে। এক্ষেত্রে যোগাযোগ সমন্বয়ের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতা থাকতে হবে।

২। আয়কর সংক্রান্ত পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নিয়মিত পড়াশোনা করা এবং নিয়মিত জ্ঞান সঞ্চালন করা জরুরি।

৩। আয়কর সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা বাধ্যতামূলক।

৪। আইন ব্যাখ্যার ব্যাপারে পারদর্শিতা থাকা খুবই জরুরি।

৫। ফলাফলভিত্তিক কাজের ক্ষেত্রে নিবিষ্টচিত্ত হওয়া জরুরি।   

৬। প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ক্ষেত্রে হিসাবরক্ষণ ও আয়করের ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য অধিগ্রহণের ব্যাপারে পটু হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও স্বত্বাধিকারী এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে যে কোন ব্যক্তিকে অধিগ্রহণের প্রয়োজনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করতে হবে।

একজন আয়কর আইনজীবীর মাসিক আয় কেমন?

মাসিক সম্মানী বা আয়ের বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ হলেও এ পদে নিয়োগ পেলে সাধারণত আপনাকে মাসিক ৫০০০০ টাকা অথবা এর অধিক সম্মানী দেওয়া হতে পারে।

একজন আয়কর আইনজীবীর ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

আয়কর আইনজীবীর ক্যারিয়ার ব্যক্তিগত নাম, যশ ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল। সাধারণত অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে আয়কর আইনজীবীর মাসিক বা কেসভিত্তিক সম্মানী বৃদ্ধি পায়।

 

2 thoughts on “আয়কর আইনজীবী”

Leave a Comment