ইউরোলজিস্ট

মূত্রতন্ত্রের (ব্ল্যাডার, ইউরেথ্রা, এড্রেনাল গ্ল্যান্ড) যে কোন প্রকার রোগ নির্ণয় এবং নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা করে থাকেন একজন ইউরোলজিস্ট। পুরুষদের প্রজননতন্ত্রের (প্রোস্টেট, টেস্টিকল) চিকিৎসা ও ইউরোলজিস্ট করে থাকেন।

এক নজরে একজন ইউরোলজিস্ট

সাধারণ পদবী:ইউরোলজিস্ট
বিভাগ:চিকিৎসা বিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানের ধরন:সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, রোগ ও চিকিৎসা গবেষণা কেন্দ্র
ক্যারিয়ারের ধরন:পার্ট-টাইম, ফুল টাইম।
লেভেল:মিড
অভিজ্ঞতা সীমা:অন্তত ৫/৬ বছর হাসপাতালে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে
সম্ভাব্য বেতনসীমা:প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
সম্ভাব্য বয়সসীমা:নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই
মূল স্কিল:মূত্র সংবহনতন্ত্র ও কিডনি রোগের নিরাময় সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে, সার্জারিতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
বিশেষ স্কিল:মূত্রথলি-কিডনির পাথর অপসারণ সহ চিকিৎসার অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্বন্ধে জ্ঞান, ক্যান্সার নিরাময়ে দক্ষতা
লিঙ্গঃবাংলাদেশে নারী ইউরোলজিস্ট এর সংখ্যা হাতে গোনা কয়েকজন। বর্তমানে নারী ইউরোলজিস্ট এর চাহিদা অনুভূত হওয়ায় নারীদের এ পেশায় আসতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে।

কোন ধরণের শিল্প বা ইন্ডাস্ট্রিতে একজন ইউরোলজিস্ট কাজ করেন?

প্রায় সব মানসম্মত সরকারি/বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসা কেন্দ্রে ইউরোলজিস্ট প্রয়োজন। ইউরোলজির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল গুলোতে ইউরোলজিস্ট হিসেবে কাজের সুযোগ অনেক বেশি। এছাড়া কিডনি হাসপাতালগুলোতে নেফ্রোলজিস্ট এর পাশাপাশি ইউরোলজিস্ট এর প্রয়োজন হয়।

একজন ইউরোলজিস্ট কী ধরনের কাজ করেন?

  • মূত্রসংবহন তন্ত্রের যেকোন প্রকার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন;
  • মূত্রসংবহন তন্ত্রে ক্যান্সার হলে তার চিকিৎসাও করেন, প্রয়োজন হলে ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেন;
  • বায়োপসি সহ প্রয়োজন হলে মুত্র সংবহন তন্ত্রের যেকোন অঙ্গের সার্জারি করা;
  • কিডনি প্রতিস্থাপনের মত বড় ধরনের অপারেশন করা;
  • কিডনি ও মূত্র সংবহনতন্ত্রের পাথর অপসরণের জন্য ইউরেটেরোস্কপি করা;
  • ইউরোলজি সংক্রান্ত গবেষণা ও কর্মশালা আয়োজন করা;
  • পুরুষ প্রজননতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা;

একজন ইউরোলজিস্টের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

ইউরোলজি বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে অবশ্যই এমবিবিএস পাশের পর ইউরোলজিতে এফসিপিএস/এফআরসিএস/এমএস/এমডি/পিএইচডি ডিগ্রী থাকতে হবে

একজন ইউরোলজিস্ট কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • ইউরোলজি সংক্রান্ত আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও চর্চা রাখতে হবে;
  • এটি মানব দেহের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন ও সংবেদী অঙ্গ বিধার দক্ষতার সাথে সার্জারি ও অন্যান্য চিকিৎসা করতে হবে;
  • মুত্রতন্ত্রের ক্যান্সার চিকিৎসায় পারদর্শী হতে হবে;
  • গবেষণায় মনোনিবেশ করতে হবে এবং জার্নাল থাকতে হবে;

কোথায় পড়বেন ইউরোলজি?

এমবিবিএস পাশের পর ইউরোলজিতে এমএস ( মাস্টার অব সার্জন) পড়বার সুযোগ আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে(BSMMU)। এছাড়া বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এন্ড সার্জনস(BCPS) এর অধীনে ইউরোলজিতে এফসিপিএস ডিগ্রী দেওয়া হয় ।

একজন ইউরোলজিস্টের কাজের ক্ষেত্র এবং সুযোগ কেমন?

বাংলাদেশের প্রায় সব মানসম্মত সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে আলাদা কিডনি ও ইউরোলজি বিভাগ আছে। ই বিভাগের সর্বত্রই ইউরোলজি বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন। কিডনি ও ইউরোলজির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রে রয়েছে কাজের সুযোগ। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিসেস এন্ড ইউরোলজি, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট, সেন্টার ফর কিডনি ডিজিসেস এন্ড ইউরোলজিকাল হসপিটাল, ইউরোলজি ফাউন্ডেশন সহ ইউরোলজির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে ইউরোলজিস্টদের একচেটিয়া আধিপত্য। এছাড়া সেনাবাহিনীতে মেডিকেল কোরেও কাজের সুযোগ আছে।

একজন ইউরোলজিস্টের মাসিক আয় কেমন?

একজন সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক গ্রেড-৩, সহযোগী অধ্যাপক গ্রেড-৪ ও সহকারী অধ্যাপক গ্রেড- ৫ এর বেতন পান। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে সাময়িকভাবে রোগী দেখার সুযোগ আছে। প্রাইভেট প্র্যাক্টিস করে অনেক উপার্জনের সুযোগ আছে।

ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন ইউরোলজিস্ট ?

এমবিবিএস পাশের পর ইউরোলজিতে বিশেষজ্ঞ হতে চাইলে ইউরোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে হবে। বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার হিসেবে সরকারি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে যোগদানের পর ইউরোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রী থাকলে মেডিকেল কলেজের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হওয়া যায়। সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অন্তত ৫/৬ বছর দায়িত্ব পালন করলে দক্ষতার ভিত্তিতে সহযোগী অধ্যাপক হওয়া সম্ভব। সহযোগী অধ্যাপক হতে অধ্যাপক হতে দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া লাগে। তবে একাধিক গবেষণা পত্র থাকা বাধ্যতামূলক ।ইউরোলজিস্ট হিসেবে হাসপাতাল গুলোর ইউরোলজি বিভাগের প্রধান, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব কিডনি ডিজিসেস এন্ড ইউরোলজি এর পরিচালক এমনকি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হবার সুযোগ থাকে। এছাড়া অনেক সময় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজের সুযোগ থাকে। ইউরোলজিতে উচ্চতর ডিগ্রী থাকলে আর্মি মেডিকেল কোরে মেজর পদে কাজ করা সম্ভব ।সরকারি চাকুরীর পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতেও ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। এছাড়া প্রাইভেট প্র্যাক্টিস এর সুযোগ তো থাকছেই।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা

ডাঃ আসিফ মাহমুদ, মেডিকেল অফিসার, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

Leave a Comment