ক্রিকেট আম্পায়ার

বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। ক্রিকেট খেলায় ক্যারিয়ার গড়তে চান এমন মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তবে ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে না পারলে ক্রিকেটে কাজ করার সুযোগ শেষ হয়ে যায় না বরং কোচ অথবা আম্পায়ার হিসেবে কাজ করা যায়। ক্রিকেট খেলায় আম্পায়ারের কাজটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ এবং শুধুমাত্র দেশ নয় বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও খ্যাতির সাথে আম্পায়ার হিসেবে কাজ করা যায়।

একজন ক্রিকেট আম্পায়ার কোথায় কাজ করেন? 

ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনি সাধারণত নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পেতে পারেন –

১। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(BKSP)

২। বিভিন্ন বেসরকারি ক্রিকেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

৩। ক্রিকেট ক্লাব

৪। প্রাথমিক ধাপ থেকে কাজ করে এমন ক্রিকেট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান

৫। জেলা ক্রীড়া সংস্থা

৬। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড

৭। আইসিসি এলিট প্যানেল

৮। ঘরোয়া টি-টুয়েন্টি লীগ

৯। জাতীয় ও বিভাগীয় ক্রিকেট লীগ

প্রতিষ্ঠানভেদে কাজের চাপ ও কাজের ধরন একেকরকম হতে পারে। তবে উপরের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য আম্পায়ার হিসেবে আপনাকে প্রতিনিয়ত লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার পদোন্নতি বা প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে উপরের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য আপনার ব্যক্তিগত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার গভীরতাই মুখ্য বিবেচ্য বিষয়।

একজন ক্রিকেট আম্পায়ার কী ধরনের কাজ করেন?

ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে কাজ করতে চাইলে মনে রাখতে হবে ক্রিকেটে আম্পায়ার এবং ম্যাচ রেফারির কাজ বেশ আলাদা। এক্ষেত্রে একজন ক্রিকেট আম্পায়ারের আওতায় পড়ে এমন কিছু কাজ হল –

১। খেলা চলাকালীন মাঠের অভ্যন্তরে খেলা সংক্রান্ত যে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া। এখানে খেলা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বলতে – আউট, নো বল, ওয়াইড, ডেড বল প্রভৃতি খেলার প্রক্রিয়াজনিত সিদ্ধান্তগুলোর কথা বলা হয়েছে।

২। খেলার (ম্যাচের) সময় ও ওভারের হিসাব রাখা।

৩। কোন খেলোয়াড়ের অশোভন আচরণ এর  কথা ম্যাচ রেফারিকে জানানো। ম্যাচ রেফারি সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন ম্যাচের আম্পায়ারদের পরামর্শ ও জমাকৃত তথ্যের ভিত্তিতে।

৪। আম্পায়ার হিসেবে স্লো-ওভার রেট তথা ইনিংসে একটি দল সময়মত খেলা শেষ করছে কিনা অথবা শেষ করতে পারছে কিনা তার হিসাব রাখা।  

৫। বৃষ্টি হলে মাঠের অবস্থা খেলার উপযুক্ত আছে কিনা এবং ম্যাচ পুনরায় চালু করা যাবে কিনা সে সিদ্ধান্ত একজন ক্রিকেট আম্পায়ার দেন মাঠের অবস্থা সরেজমিনে পরিদর্শন করার পর।

৬। ক্রিকেটের নিয়ম-নীতি অনুযায়ী সমগ্র ম্যাচটি পরিচালনা করা। আন্তর্জাতিক, জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে সাধারণত দুইজন আম্পায়ারকে একটি ম্যাচের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে ক্যারিয়ার যখন একদম শুরু করবেন তখন হয়তো প্রাথমিক পর্যায়ে আপনাকে একাও একটি ম্যাচ পরিচালনা করতে হতে পারে।

৭। খেলোয়াড়দের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখতে হয় এবং যে কোন ধরনের দ্বন্দ্ব পরিহার করে ম্যাচ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হয়।

একজন ক্রিকেট আম্পায়ারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়? 

ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে কাজ করতে চাইলে সাধারণত কোন গতানুগতিক ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। সাধারণত আপনি ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রিপ্রাপ্ত কেউ না হলেও আম্পায়ার হিসেবে কাজ করতে পারবেন। ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে আসলে অভিজ্ঞতা মুখ্য একটি বিষয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যারিয়ার শুরু করতে শুধুমাত্র ইচ্ছার প্রয়োজন। পরবর্তীতে প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লাব ক্রিকেটে ধীরে ধীরে কাজ করতে করতে নাম ও যশ ছড়ালে আপনাকে জেলা ক্রীড়া সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকলে আপনি আম্পায়ার হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেলেও পেতে পারেন।

সাধারণত ৪ থেকে ৫ বছরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা এবং জাতীয় ক্রিকেট লীগের প্রথম ধাপে নিয়োগ পাওয়া যায়। ৫ বছরের অধিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলে আপনাকে জাতীয় ক্রিকেট লীগের সর্বোচ্চ ধাপে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম্পায়ারিং-এর লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।

একজন ক্রিকেট আম্পায়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। ক্রিকেট বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক

২। ক্রিকেটের নিয়ম-কানুন বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা থাকতে হবে।

৩। এমসিসি ও আইসিসি প্রণোদিত নিয়মিত হালনাগাদ করা আইন-কানুন ও নতুন নিয়মাবলি নিয়ে জানতে হবে।

৪। ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচারের ক্ষমতা থাকা একজন আম্পায়ারের জন্য বাধ্যতামূলক। আম্পায়ারিং ক্যারিয়ারে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা দিয়ে ভালো করা সম্ভব নয়। বরং আপনার সিদ্ধান্ত প্রদানের কার্যকারিতা ও যৌক্তিকতার উপর নির্ভর করবে আপনার ক্যারিয়ারের অগ্রগতি ও উন্নয়ন।

৫। ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্মিত ব্যাখ্যা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে এবং এমসিসি প্রদত্ত আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্ত গঠন করতে হবে।

৬। খেলোয়াড়দের সাথে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে।

একজন ক্রিকেট আম্পায়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে এবং স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে। অভিজ্ঞতা লাভের সাথে সাথে আপনি জেলা পর্যায়, বিভাগীয় পর্যায় ও জাতীয় পর্যায়ে ক্রিকেট আম্পায়ার হিসেবে কাজ করতে পারেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আম্পায়ারিং-এর লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু মৌখিক ও লিখিত পরীক্ষা দিয়ে আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে।

কোথায় শিখবেন আম্পায়ারিং? 

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে আম্পায়ারিং কোর্সের আয়োজন করা হয়।

16 thoughts on “ক্রিকেট আম্পায়ার”

    • আপনি আম্পায়ার হবার জন্য কোন ট্রেনিং নিচ্ছেন কি?

      Reply
  1. আমি আম্পায়ার হতে চাই,কোথায় কোর্স করবো??

    Reply

Leave a Comment