নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার

বর্তমানে পৃথিবীতে যে পেশাগুলো মানুষের পছন্দের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে রয়েছে সেগুলোর মধ্যে নেটওয়ার্কিং অন্যতম। এ যুগ অনেকটাই যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। সফল ও নিশ্চিত ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য এ পেশা অত্যন্ত উপযোগী। নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে বিপুল পরিমাণ কাজ দ্রুততার সঙ্গে করা যায়। ফলে বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, কর্পোরেট হাউজ,এনজিও ছাড়াও সরকারি অফিসগুলোকেও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর আওতায় আনা হচ্ছে। এজন্য নেটওয়ার্কারদের চাহিদা এখন তুঙ্গে।

এক নজরে একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার

সাধারণ পদবী:নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, সিস্টেম সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট
বিভাগ:কমিউনিকেশন এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলোজি
প্রতিষ্ঠানের ধরন:ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিযোগাযোগ শিল্প, সফটওয়্যার কোম্পানি, নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার
ক্যারিয়ারের ধরন:ফুল টাইম
লেভেল:মিড
অভিজ্ঞতা সীমা:নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/কম্পিউটার সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠানভেদে ২-৫ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়।
সম্ভাব্য বেতনসীমা:শুরুতে মাসিক ২০-২৫ হাজার টাকা। অনেক অভিজ্ঞদের বেলায় বেতন ২/৩ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে ।
সম্ভাব্য বয়সসীমা:বাঁধাধরা বয়স নেই। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানে ২২-৩৫ বছরের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
মূল স্কিল:নেটওয়ার্কিং, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সিস্টেম, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, ল্যান, ইন্টারনেট প্রটোকল, ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, সুইচিং এন্ড রাউটিং
বিশেষ স্কিল:সূক্ষ বিশ্লেষণী ক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ , ই-কমার্স এর ধারণা

কোন ধরণের প্রতিষ্ঠানে একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার কাজ করেন?

বিভিন্ন টেলিকম সেন্টার, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, বিমান সংস্থা, শেয়ারবাজার, ট্রাভেল এজেন্সি, নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানি, সফটওয়্যার কোম্পানি, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গ্রুপ, বায়িং হাউস, সরকারী বিভিন্ন প্রোজেক্টে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়াররা অনায়াসে কাজ করতে পারেন। সরকার তথ্য প্রযুক্তি পার্ক স্থাপন সহ তথ্য প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে অসংখ্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর ফলে নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারদের সরকারী কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে।

একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার কী ধরনের কাজ করেন?

  • ডাটা কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক এর পরিকল্পনা থেকে শুরু বাস্তবায়নের কাজ করা, বিভিন্ন অংশের কনফিগারেশন করা, সার্ভাস ডিজাইন করা;
  • কোন অংশে সমস্যা হলে তা বিশ্লেষণ করে সমাধান করা;
  • ডাটা কমিউনিকেশনের জন্য প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার ও ক্যাবল লেআউট ডিজাইন তৈরি;
  • ডিজাইন অনুযায়ী নেটওয়ার্ক প্ল্যান বাস্তবায়নের সময় সকল তথ্য নথিবদ্ধ করা এবং সম্পুর্ন টিমকে নির্দেশনা দেওয়া;
  • ভবিষ্যতের চাহিদা অনুমান করে নতুন নেটওয়ার্ক ডিজাইন তৈরি করা;
  • বিদ্যমান সিস্টেমের কোন অংশে যেমন সুইচ, রাউটার, সিকিউরিটি সফটওয়্যার এর আপডেট প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা নেওয়া;
  • নেটওয়ার্ক সিস্টেম এর সকল ইকুইপমেন্ট এর রক্ষণাবেক্ষণ করা;
  • সম্পুর্ণ ডাটাবেজ সিস্টেম এর নিরাপত্তা সুরক্ষা নিশ্চিত করা;

একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট হতে চাইলে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং/কম্পিউটার এন্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি/ ইলেকট্রনিক এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করতে হবে। তবে চাকুরীর ক্ষেত্রে ডিগ্রীর পাশাপাশি নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার এর উপর কোর্স থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে ডিগ্রী না থাকলেও CCNA(সিসকো সার্টিফাইড নেটওয়ার্ক অ্যাসোসিয়েট) ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কোর্স করে দক্ষ হলে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় । যেমন ADDIE Soft Limited এ সিস্টেম এন্ড নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার পদে আবেদনের জন্য লিনাক্স ও মাইক্রোটিক অপারেটর সিস্টেম এর উপর কোর্স করা থাকলে অগ্রাধিকার পাওয়া যাবে।

একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের বিজনেস প্ল্যান সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে;
  • তথ্য প্রযুক্তির নতুন নতুন বিষয় জানতে হবে;
  • লক্ষ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে সমগ্র দলের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে;
  • যেকোন রকমের সমস্যায় নেটওয়ার্কিং এর জ্ঞান থেকে দ্রুত সমাধান করার দক্ষতা থাকতে হবে;
  • পরিশ্রমী হতে হবে এবং কোন সমস্যা হলে যে কোন মুহুর্তে কাজ করার মানসিকতা থাকতে হবে;
  • বিভিন্ন ধরনের নেটওয়ার্ক প্ল্যানিং এর জ্ঞান রাখতে হবে;

কোথায় পড়বেন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারিং?

বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বার সুযোগ আছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি(MIST), ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ(ULAB) থেকে ইলেকট্রনিক এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ ব্যাচেলর ডিগ্রী দেওয়া হয়।
বিভিন্ন ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের পাশাপাশি বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও CCNA কোর্সটি করার সুযোগ রয়েছে। দেশে সিসকোর লোকাল এডুকেশন অ্যাকাডেমি হলো—বুয়েট, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(AUST), আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ(AIUB), ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(SUST), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি(UIU) প্রভৃতি। উচ্চ মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেও এই কোর্সগুলোতে ভর্তি হওয়া যায়।

একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?

একজন নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট যে কোনো কোম্পানিতে জুনিয়র নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর থেকে শুরু করে নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারেন। এ পেশায় প্রাথমিক অবস্থায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেতন পাওয়া যায়। এন্ট্রি লেভেলের জব গুলোতে ভালো করলে ২/৫ বছর পর নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে বেতন ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা হতে পারে। পরবর্তীতে বেড়ে তা ২ থেকে ৩ লাখ টাকাও হতে পারে । দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে দেশের বাইরে কাজের সুযোগ পাওয়া সম্ভব। দেশের বাইরে অনেকে ৭-১০ লাখ টাকাও উপার্জন করছেন।

ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ারের?

একদম শুরুতেই কেউ নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে পারেন না। নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর/কম্পিউটার সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে শুরুতে কাজ করতে হয়। এ সব পেশায় দক্ষতার পরিচয় দিলে দ্রুত নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদোন্নতি হয়। সেক্ষেত্রে ২-৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। শুরুতে জুনিয়র নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতে হয়। এর পর যোগ্যতা অনুযায়ী সিনিয়র নেটওয়ার্ক আর্কিটেক্ট হবার সুযোগ থাকে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই মেধা ও দক্ষতা থাকতে হবে।

1 thought on “নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার”

Leave a Comment