ফিটনেস ট্রেইনার

বর্তমানে বাংলাদেশে ছোট আকারে জিমনেসিয়াম বা ব্যায়ামাগারের ব্যবসা করছেন অনেকে। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও বড় হোটেলগুলোতে জিমনেসিয়াম থাকে। সেক্ষেত্রে জিমনেসিয়ামে ব্যায়াম বা অনুশীলন করতে চান এমন মানুষদের জন্য ফিটনেস ট্রেইনার থাকেন একজন অথবা বেশ কয়েকজন।

এক নজরে একজন ফিটনেস ট্রেইনার

সাধারণ পদবী: ফিটনেস ট্রেইনার (DBA)
বিভাগ: শরীরচর্চা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: প্রাইভেট ফার্ম
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: এন্ট্রি
অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ১ বছর
বেতনসীমা: ৳৩০,০০০ – ৳৫০,০০০
সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২৬ – ৩৫ বছর
মূল স্কিল: শরীরচর্চা বিষয়ক জ্ঞান, পুষ্টি ও ডায়েট সংক্রান্ত জ্ঞান
বিশেষ স্কিল: ধৈর্য, যোগাযোগের দক্ষতা

একজন ফিটনেস ট্রেইনার কোথায় কাজ করেন?

  • ব্যক্তিগত জিমনেসিয়াম (এক্ষেত্রে সম্পদশালী যারা আছেন তারা সাধারণত হোটেল বা অন্য কোথাও ব্যায়াম বা অনুশীলন করার চেয়ে নিজের বাসাতেই অনুশীলন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন);
  • ছোট আকারের জিমনেসিয়াম বা ব্যায়ামাগার যেখানে সদস্যভিত্তিক অনুশীলনের সুযোগ দেওয়া হয়। অর্থাৎ জিমনেসিয়ামের সদস্যপদ নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবলমাত্র আপনি নিয়মিত অনুশীলন করতে পারবেন;
  • বড় হোটেলগুলোর জিমনেসিয়াম (যেমন – র‍্যাডিসন, ম্যারিয়ট, দ্য প্যালেস, রয়্যাল টিউলিপ প্রভৃতি চার বা পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে অতিথিদের জন্য আলাদা জিমনেসিয়াম থাকে তাদের অবস্থানকালীন সময়ে ব্যবহারের জন্য)।
  • এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন ফিটনেস ট্রেইনারকে নিয়োগ দেওয়া হয় অনুশীলনকারীদের সাহায্য করার জন্য। কী ধরনের অনুশীলন করা দরকার, কী ধরনের শরীর তৈরি করতে চান এবং কী ধরনের কন্ডিশনিং প্রয়োজন – অনুশীলনকারীদের এই ধরনের পরামর্শ প্রদানের জন্যই মূলত একজন ফিটনেস ট্রেইনারকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

একজন ফিটনেস ট্রেইনার কী ধরনের কাজ করেন?

  • কী ধরনের অনুশীলন করবেন তা ঠিক করে দেওয়ার দায়িত্ব একজন ফিটনেস ট্রেইনারের;
  • আপনি ফিটনেস ট্রেইনার হলে আপনাকে নিয়মিত অনুশীলনকারীকে একটি ডায়েট চার্ট দিতে হয় এবং তার ডায়েট কন্ট্রোল নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই অনুশীলনকারীর সাথে কথা বলে নিতে হবে তিনি কী ধরনের অনুশীলন ও ব্যায়াম করতে চান।এর পাশাপাশি তার শরীরের গঠন কেমন তা-ও আপনার দেখে নিতে হবে। তিনি শরীরের গঠন কেমন বানাতে চান এইক্ষেত্রে সেটিও আপনাকে জানতে হবে;
  • শুরুর দিকে একজন অনুশীলনকারীর কন্ডিশনিং এর জন্য প্রয়োজনীয় কার্ডিও ও অন্যান্য ব্যায়াম আপনার ঠিক করে দিতে হবে;
  • একজন অনুশীলনকারী ঠিকমত তার ব্যায়ামগুলো করছেন কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে অনুশীলনকারী সঠিক পথে না থাকলে তাকে নির্‌দিষ্ট করে বলে দেওয়ার দায়িত্ব একজন ফিটনেস ট্রেইনার-এর উপর বর্তায়;
  • ডায়েট এবং ব্যায়াম নিয়ে অনুশীলনকারীদের পরামর্শ দিতে হবে। সবাই একই উদ্দেশ্য সাধনে ব্যায়াম করতে আসেন না জিমনেসিয়ামে। অনেকে চান শরীরের চর্বি কমাতে এবং শরীরকে স্থূল থেকে একহারা গড়নের বানাতে। আবার অনেকের ইচ্ছা থাকে পেশিবহুল শরীর বানানোর। এক্ষেত্রে স্বভাবতই ডায়েট ও অনুশীলনের ধরনে বেশ বড় ধরনের ভিন্নতা থাকে। এ ধরনের ভিন্নতা সম্পর্কে একজন ফিটনেস ট্রেইনারকে অবশ্যই অবগত থাকতে হয় এবং সে অনুযায়ী একজন অনুশীলনকারীকে নির্দেশনা দিতে হয়;
  • অনুশীলনকারীদের স্বাস্থ্যসচেতন জীবন নির্বাহের জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতে হয়।

একজন ফিটনেস ট্রেইনার কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ ফিটনেস ট্রেইনার নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়। এক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা এবং ফিটনেস প্রশিক্ষণের উপর কোর্সভিত্তিক সার্টিফিকেট বা সনদ থাকলে প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ হলেও আপনার নিজের শরীরের বাহ্যিক গঠনের উপর ভিত্তি করে অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
অনেকদিন ধরে অনুশীলন করছেন এমন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। অনেকদিন অনুশীলন করার ফলে এক্ষেত্রে প্রার্থীর বাস্তবিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বেশ সমৃদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে তাকে নিয়োগ দেয় ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে। নিউট্রিশন বা পুষ্টি অথবা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক আছে এবং একইসাথে জিমনেসিয়াম বা ব্যায়ামাগারে অনুশীলনের অনেকদিনের অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় ধরনের প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।

বয়সঃ কিছু হোটেলে ২৫ থেকে ৩৫ বছরের বয়সসীমা উল্লেখ করে দেওয়া থাকতে পারে। সাধারণত নারী বা পুরুষের কথা আলাদাভাবে নির্দিষ্ট করা না থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে পুরুষ কাউকে নিয়োগের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকতে পারে।

অভিজ্ঞতাঃ অনেকসময় শরীরের বাহ্যিক গঠন তৈরি করার মাধ্যমে বেশ কিছু ব্যক্তি বিদেশে যশ ও খ্যাতি অর্জন করতে পারেন তার শারীরিক গঠনের সৌন্দর্যের জন্য। সেক্ষেত্রে যশ ও খ্যাতির উপর ভিত্তি করে অনেক ক্ষেত্রে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয় অথবা তারা নিজেরাই নিজেদের উদ্যোগে জিমনেসিয়াম বা ব্যায়ামাগার প্রতিষ্ঠা করেন আগ্রহী মানুষদের প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সুবিধার জন্য।
কিছু হোটেলের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের ন্যূনতম অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়।

একজন ফিটনেস ট্রেইনারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • পুষ্টি ও ডায়েট নিয়ে সম্যক ধারণা থাকতে হবে;
  • মানুষের শারীরিক গঠন নিয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে। মানুষের সাধারণত তিন ধরনের শারীরিক গঠন দেখা যায় (এন্ডোমর্ফিক, এক্টোমর্ফিক ও মেসোমর্ফিক)। এই তিন ধরনের শারীরিক গঠন নিয়ে ভালো জানাশোনা থাকা জরুরী যেহেতু কাউকে পরামর্শ দিতে হলে আপনার তার শারীরিক গঠনের ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে ডায়েট ও ব্যায়াম নির্দিষ্ট করার ক্ষেত্রেও এই ধারণা ও জ্ঞান থাকা বাধ্যতামূলক;
  • সময়জ্ঞান থাকা বেশ জরুরী কারণ অনুশীলনকারীদের সময় বেশ মূল্যবান। অনুশীলন যারা করতে আসেন তারা সাধারণত তাদের নিয়মিত কাজের বাইরে আলাদা করে সময় রাখেন ব্যায়াম বা অনুশীলনের জন্য। সেক্ষেত্রে ফিটনেস ট্রেইনার সময়মত উপস্থিত না থাকলে এবং সময়মত কাজ করতে না পারলে অনুশীলনকারীর জন্য ব্যাপারটি বেশ বিরক্তিকর ও অযাচিত হয়ে পড়ে;
  • শারীরিক গঠনের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ সময় ব্যয়ের মাধ্যমে সাফল্য পাওয়া সম্ভব সে ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা থাকতে হবে। বিষয়টি ব্যক্তিসাপেক্ষ হলেও একটা সাধারণ ধারণা থাকা এক্ষেত্রে জরুরী;
  • অনুশীলনকারীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে এবং তাদের সাথে যোগাযোগে পারদর্শী হতে হবে। অনুশীলন সমন্বয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ পারদর্শিতা থাকলে তা স্বাচ্ছন্দ্যময় আবহ ও পরিবেশের সৃষ্টি করতে পারে জিমনেসিয়ামে।

কোথায় পড়বেন?

ফিটনেস ট্রেইনার নিয়োগের ক্ষেত্রে সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক নয়। এক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা এবং ফিটনেস প্রশিক্ষণের উপর কোর্সভিত্তিক সার্টিফিকেট বা সনদ থাকলে প্রার্থীদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ হলেও আপনার নিজের শরীরের বাহ্যিক গঠনের উপর ভিত্তি করে অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।

একজন ফিটনেস ট্রেইনারের মাসিক আয় কেমন?

বিষয়টি কাজ, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। ভিজিটিং ট্রেইনার হিসেবে অনেকে মাসিক ৫০০০০ টাকা সম্মানী নিয়ে থাকেন যেখানে ট্রেইনার প্রতিদিন তিন ঘন্টা এবং প্রতি সপ্তাহে তিনদিন হিসাবে কাজ করেন। আবার পার্ট টাইম ট্রেইনার হিসেবে কাজ করলে মাসিক সম্মানী প্রায় এক লাখ টাকার মত হতে পারে যেখানে ট্রেইনার দিনে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় দেন সপ্তাহে ছয়দিন হিসাব করে। যদি ফুলটাইম কাজ করার চুক্তি হয় সেক্ষেত্রে অনেকে মাসিক দুই লাখ টাকার মত সম্মানী নেন যেখানে ট্রেইনার প্রতিদিন আট ঘন্টা করে সাপ্তাহিক ছয়দিন কাজ করেন অনুশীলন বা ব্যায়াম প্রশিক্ষণের জন্য। ছোট প্রতিষ্ঠানে কাজের ক্ষেত্রে এবং অভিজ্ঞতা কম হলে মাসিক সম্মানী পাঁচ হাজার টাকার মত হতে পারে।
ফিটনেস ট্রেইনারের নিয়োগ ও মাসিক আয় – উভয়ই আদতে অভিজ্ঞতা, যশ ও খ্যাতির উপর নির্ভরশীল। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত কোন সনদ থাকলে এক্ষেত্রে তা ভালো কাজে দেয়। অভিজ্ঞতা যত বেশি হবে আপনার মাসিক আয় তত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক ক্ষেত্রে শারীরিক গঠনের সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করেও আপনার চাহিদা তৈরি হতে পারে যা আপনার মাসিক আয় বেশি হওয়ার ক্ষেত্রেও একটি বড় নিয়ামক হতে পারে।

একজন ফিটনেস ট্রেইনারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

এখানে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। আপনার অভিজ্ঞতা কম হলে আপনাকে শুরুতে সহকারী ফিটনেস ট্রেইনার অথবা একদমই নতুন হলে আপনাকে জুনিয়র ফিটনেস ট্রেইনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে মাসিক সম্মানী বেশ কম হয়। অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হলে আপনি পরবর্তীতে ফিটনেস ট্রেইনার এবং সিনিয়র ফিটনেস ট্রেইনার-এ পদোন্নতি পেতে পারেন। কিছু ক্ষেত্রে গভীর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জিমনেসিয়াম ম্যানেজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় যেখানে মাসিক আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং একইসাথে পদের গুরুত্বও অনেক বেশি হয়।

Leave a Comment