সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার

মিউজিক বা গানবাজনা নিয়ে আগ্রহী এমন অনেকেই আছেন যারা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বা এডিটর হিসেবে কাজ করতে চান। তবে গানবাজনা করেন না এমন অনেকেও আছেন সাউন্ড ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে আগ্রহী নিতান্ত শখের বশে অথবা শব্দ নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন বলে। বিদেশে আবহ সংগীত, শব্দ সঞ্চালন, শব্দ সমন্বয় বা সাউন্ড এডিটিং – এ ধরনের কাজের প্রতি সম্মান এবং পুরস্কার বিদ্যমান হলেও বাংলাদেশে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের কাজ এখনও সেভাবে প্রচলিত নয়।

এক নজরে একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার

সাধারণ পদবী: সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগ: বিনোদন
প্রতিষ্ঠানের ধরন: বিনোদন সংস্থা
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, পার্ট টাইম
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ১ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বেতনসীমা: কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২৬ – ৩০ বছর
মূল স্কিল: সঙ্গীত সম্পর্কিত জ্ঞান, মিউজিক্যাল যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষতা, সৃজনশীলতা
বিশেষ স্কিল: ধৈর্য, মানসিক চাপ সামলানোর ক্ষমতা

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করেন?

সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের কাজের ধরন হতে পারে দুই ধরনের –

  • লাইভ সাউন্ড বা সরাসরি শব্দ সম্পাদনের কাজ;
  • ব্রডকাস্ট বা মিডিয়া স্টেশনের কাজ

এই দুই কাজের ধরনের উপর ভিত্তি করে একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের কর্মক্ষেত্র নির্ধারিত হয়। লাইভ সাউন্ডের ক্ষেত্রে সরাসরি যে অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচার করা হয় এবং কনসার্ট বা অন্যান্য যেসকল অনুষ্ঠান দর্শকদের সামনে সরাসরি উপস্থাপিত হয় সেসকল অনুষ্ঠানে কাজ করতে হয় একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে। এক্ষেত্রে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট বা অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোতে আপনি নিয়োগ পেতে পারেন। কনসার্ট ব্যবস্থাপনায় বিশেষভাবে পারদর্শী কিছু প্রতিষ্ঠান আছে সেগুলোতেও আপনি নিয়োগ পেতে পারেন।
মিডিয়া স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে টেলিভিশন ও রেডিও স্টেশনগুলোতে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয় শব্দশৈলী ব্যবস্থাপনার জন্য। এক্ষেত্রে সব ধরনের অনুষ্ঠান এবং খবর প্রচারের সময় বিশেষভাবে কাজ করা লাগে একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের। এছাড়াও বিভিন্ন কনভেনশন হল বা কমিউনিটি সেন্টার যাদের নিজস্ব শব্দ ব্যবস্থাপনা আছে সেখানে আপনি নিয়োগ পেতে পারেন।
এগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোতেও আপনি কাজ করতে পারেন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে।

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার কী ধরনের কাজ করেন?

লাইভ সাউন্ড এবং মিডিয়া স্টেশন উভয় ক্ষেত্রেই একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারকে সাউন্ড মিক্সিং এবং সাউন্ড এডিটিং বা শব্দ সম্পাদনার কাজ করতে হয়। আবহ তৈরির ক্ষেত্রে তা শব্দ কার্যকরভাবে সম্পাদনের দায়িত্ব একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের। সাউন্ড মিক্সিং-এর ক্ষেত্রে বেজ, ভোকাল সহ অন্যান্য দিকগুলোর সমন্বয় করতে হবে আপনাকে। সামগ্রিক সাউন্ড সিস্টেম এবং স্পীকারের দেখভাল করার দায়িত্বও এক্ষেত্রে আপনার। লাইভ সাউন্ড ও স্টেশনগুলোর ক্ষেত্রে আপনার অধীনে সাউন্ড ক্রু বা কিছু কর্মী থাকবেন। তাদের কাজ সমন্বয় ও তত্ত্বাবধান করার কাজও এক্ষেত্রে আপনার উপর অর্পিত হবে।
টেলিকমের ক্ষেত্রে সামগ্রিক শব্দকৌশল সম্পাদনার কাজ আপনাকে দেখতে হবে। সাউন্ড বা শব্দের উপকরণগুলো সব ঠিক আছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব আপনার। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সাথে কথা কথা বলে সাউন্ড চিপ এবং সামগ্রিক সাউন্ড সিস্টেম ঠিক আছে কিনা তা নিশ্চিত করার কাজ আপনার উপর অর্পিত হবে।

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

লাইভ সাউন্ড এবং মিডিয়া স্টেশনগুলোতে সাধারণত শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখা হয় না। ন্যূনতম এইচএসসি পাস করেছেন এমন অনেকেই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। অনেকক্ষেত্রে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিপ্লোমাধারী একজনকেও নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। সাউন্ড বা শব্দ নিয়ে বিশেষ ধারণা ও জ্ঞান না থাকলে অনলাইন অথবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সাউন্ড বা শব্দকৌশল বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করা সম্ভব। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলেও আপনি নিয়োগ পেতে পারেন জুনিয়র সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে তবে সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় বেশ কম হবে।

টেলিকমের ক্ষেত্রে তড়িৎকৌশল বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি আছে এমন কাউকেই সাধারণত নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ১ বছরের অভিজ্ঞতার কথা সাধারণত উল্লেখ করা থাকতে পারে।

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • শব্দকৌশল নিয়ে সম্যক ধারণা থাকা জরুরী। এক্ষেত্রে জ্ঞান সীমিত হলে অনলাইন এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়াশোনা করে যথাযথ জ্ঞান ও ধারণা লাভ করতে হবে;
  • শব্দ সঞ্চালন ও আবহ তৈরির ক্ষেত্রে সৃষ্টিশীল হওয়া জরুরী। কোন শব্দ কানে লাগছে কিনা সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে;
  • সাউন্ড মিক্সিং এবং সাউন্ড এডিটিং বা শব্দ সম্পাদনার বিষয়ে ভালো ধারণা থাকতে হবে;
  • বেজ, ভোকাল এবং বাদ্যযন্ত্রের ক্ষেত্রে কোন খাতে শব্দ কী ধরনের হলে ভালো লাগবে সে ব্যাপারে ধারণা থাকলে তা নিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধাজনক হয়;
  • অভিজ্ঞতার উপর সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে শেখার মানসিকতা থাকা জরুরী এবং প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখা খুবই প্রয়োজনীয় একটি গুণ হবে আপনার জন্য।

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?

কাজ, অভিজ্ঞতা ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। টেলিকম প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মাসিক আয় সাধারণত বেশি হয়। শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আপনাকে মাসিক সম্মানী প্রদান করা হয় এক্ষেত্রে। অভিজ্ঞতা বেশি হলে মাসিক সম্মানী বেশি হয়। জুনিয়র সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার বা একদমই অনভিজ্ঞ হলে মাসিক সম্মানী সাধারণত সাত থেকে আট হাজার টাকার মত হয়। অভিজ্ঞতার সম্ভার ভারী হলে মাসিক বেতন সর্বোচ্চ পঁচিশ হাজার টাকা হতে পারে।

একজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

বিষয়টি একেবারেই প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ। আগে যেমন বলা হয়েছে তেমনই ক্যারিয়ারের পর্যায়ও এক্ষেত্রে পুরোপুরি অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরশীল। অনভিজ্ঞ হিসেবে নিয়োগ পেলে আপনাকে কিছু ক্ষেত্রে ট্রেইনি বা শিক্ষানবিশ সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার পদে নিযুক্ত করা হতে পারে। আবার কিছু ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ হলে জুনিয়র সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। অভিজ্ঞতা লাভের সাথে সাথে আপনি সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, সিনিয়র সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার এবং সর্বোচ্চ সাউন্ড ম্যানেজার পদে নিয়োগ পেতে পারেন।

Leave a Comment