সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার

কাঁচ, পোরসেলিন, সিমেন্ট – এগুলো সিরামিক জাতীয় পণ্য। একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার সিরামিক জাতীয় পণ্যের গঠন প্রণালী বিশ্লেষণ, ডিজাইন ও উৎপাদনের দায়িত্বে থাকেন।

এক নজরে একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার

সাধারণ পদবী: সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার
বিভাগ: ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রতিষ্ঠানের ধরন: কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল-টাইম
লেভেল: এন্ট্রি
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বেতনসীমা: ৳১০,০০০ – ৳৩৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়সসীমা: ২৩-৩০ বছর
মূল স্কিল: সিরামিক ম্যাটেরিয়াল সংক্রান্ত জ্ঞান, কন্ট্রোল সিস্টেম পরিচালনা, প্রসেস ডেভেলপমেন্টের দক্ষতা, ক্যাড (CAD)
বিশেষ স্কিল: প্রজেক্ট ব্যবস্থাপনা, সম্পদ ব্যবস্থাপনা

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার কোথায় কাজ করেন?

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার যেসব শিল্পে কাজ করতে পারেন, তার মধ্যে রয়েছে –

  • কাঁচ, টাইলস ও সিরামিক জাতীয় পণ্য
  • সেমিকন্ডাক্টর
  • মাইক্রোচিপস
  • ন্যানো প্রযুক্তি
  • অ্যারোস্পেস প্রযুক্তি
  • নিউক্লিয়ার প্রযুক্তি

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের বড় ধরনের কাজের সুযোগ এখনো সীমিত। বর্তমানে দেশে প্রায় দুই শতাধিক সিরামিক ও গ্লাস কারখানা আছে (সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ মার্চ, ২০১৬)। এগুলোতে মূলত শীট গ্লাস, ফ্লোট গ্লাস, টাইলস, স্যানিটারি ওয়্যার ও টেবিল ওয়্যার তৈরি হয়। এছাড়া অল্প কিছু কোম্পানি সেমিকন্ডাক্টর তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ অ্যাডভান্সড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কাজ কী?

  • সিরামিকের গঠন প্রণালী বিশ্লেষণ করা
  • সিরামিক পণ্যের ডিজাইন ও স্ট্রাকচার তৈরি
  • নতুন উৎপাদিত পণ্যের মান যাচাই করা
  • সিরামিক পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ করতে কারখানায় নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসা
  • উৎপাদন প্রক্রিয়ার সকল যন্ত্র ও ফার্নেসের রক্ষণাবেক্ষণ করা
  • উৎপাদন খরচ যথাসম্ভব কমানোর জন্য উৎপাদন প্রক্রিয়া ও কাঁচামালের ব্যবহারে পরিবর্তন করা
  • সিরামিক পণ্যের তাপসহনীয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা
  • গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন সিরামিক পণ্য উদ্ভাবন করা

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

আগে কোম্পানিগুলোতে এ পদের জন্য সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হতো। বর্তমানে সাধারণত বিএসসি বা এমএসসি ডিগ্রি চাওয়া হয়। যেমন, আর এ কে সিরামিকস লিমিটেড অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (কোয়ালিটি কন্ট্রোল) পদের জন্য সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং/টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা ও বিএসসি উভয় ডিগ্রিধারীদের আবেদনের সুযোগ দেয়।

অনেক সময় ডিগ্রির পাশাপাশি সিরামিক টেকনোলোজির বিভিন্ন দিকের উপর শর্ট কোর্স চাওয়া হয়। যেমন, আকিজ সিরামিকসে কাস্টিং সুপারভাইজার পদে আবেদনের জন্য ব্যাচেলর ডিগ্রির পাশাপাশি সিরামিক ক্যাস্টারের উপর ভোকেশনাল ট্রেনিং থাকা জরুরি।

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • সিরামিক জাতীয় পণ্যের খুঁটিনাটি জ্ঞান
  • সর্বোচ্চ উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা
  • সোলার সেল, ইনসুলেটর আর সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে ভালো ধারণা
  • কম্পিউটার এইডেড ডিজাইনে (CAD) দক্ষতা
  • ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা
  • কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ধারণা থাকা

নন-টেকনিক্যাল জ্ঞানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –

  • সৃজনশীল উপায়ে ও যৌক্তিকভাবে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
  • বিশ্লেষণী ক্ষমতা, যা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে সাহায্য করতে পারে
  • অন্যদের সাথে কাজ করার মানসিকতা থাকা
  • বিভিন্ন ধরনের কাজ একসাথে সামলানোর দক্ষতা
  • কারখানায় কাজ করার মানসিকতা থাকা

কোথায় পড়বেন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং?

বাংলাদেশে গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রথম ব্যাচেলর কোর্স শুরু হয় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (RUET)। দেশে মাস্টার্স করার সুযোগ রয়েছে একমাত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে(BUET)। এছাড়া ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে এ বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি দেয়া হয়।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অফ গ্লাস অ্যান্ড সিরামকস ও ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ আছে। ২০১৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পকারখানায় কর্মরত ডিপ্লোমা সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারদের সংখ্যা প্রায় ৫০০, যার সংখ্যা বর্তমানে আরো বেশি।

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের কাজের ক্ষেত্র কেমন?

বাংলাদেশে প্রায় ২০০টির বেশি সিরামিক ও গ্লাস কারখানা আছে। নাসির গ্লাস, শাইনপুকুর সিরামিকস, মুন্নু সিরামিকস ও আর এ কে সিরামিকসের মতো বড় কোম্পানিতে সিরামিক ইঞ্জিনিয়াররা উচ্চপদে কাজ করছেন। এছাড়া বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (BSTI) ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে (সায়েন্স ল্যাব) গবেষণার সুযোগ আছে। এর বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতার সুযোগ আছে।

একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় কেমন?

একজন সদ্য পাশকৃত ব্যাচেলর ডিগ্রিধারী সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক আয় গড়ে ৳৩০,০০০ – ৳৩৫,০০০ হয়ে থাকে। কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে মাসিক বেতন ৳৬০,০০০ – ৳৭০,০০০ হয়।

ডিপ্লোমা ডিগ্রির ক্ষেত্রে বেতন শুরুতে ৳১০,০০০ – ৳১২,০০০ হয়ে থাকে। তবে এক্ষেত্রে বেতন বৃদ্ধির হার ব্যাচেলর ডিগ্রিধারীদের থেকে কম।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে সায়েন্টিফিক অফিসার পদে মাসিক বেতন ৳২২,০০০ – ৳৫৩,০০০ পর্যন্ত হয়।

ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে একজন সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের?

এন্ট্রি লেভেলে অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগদান করবেন আপনি। দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলে ধীরে ধীরে ডেপুটি ইঞ্জিনিয়ার, চীফ ইঞ্জিনিয়ার বা প্রোডাকশন হেড হওয়া সম্ভব। ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতার সাথে সাথে মার্কেটিং আর বিজনেস সেক্টরে দক্ষতা থাকলে কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর বা সিইও হওয়াও সম্ভব।

বিদেশে বাংলাদেশি সিরামিক দ্রব্যের প্রচুর চাহিদা থাকায় দিন দিন এ শিল্পের উন্নতি হচ্ছে। সাথে চাহিদা বাড়ছে দক্ষ সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারের।

Leave a Comment