স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট কথা বলতে অক্ষম কিংবা স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে না পারা ব্যক্তিদের ভাব বিনিময় বা স্বাভাবিকভাবে কথা বলার জন্য চিকিৎসা দিয়ে সাহায্য করেন। তিনি একজন রোগীর অবস্থার ধরন, কারণ ও বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে চিকিৎসার ধরন নির্ধারণ করেন।

এক নজরে একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট

সাধারণ পদবী: স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট
বিভাগ: স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি
পেশার ধরন: ফুল-টাইম
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য অভিজ্ঞতা সীমা: ন্যূনতম এক বছরের ইন্টার্নশিপ
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন: ৳২০,০০০ – ৳২৫,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়স: ২৫ – ৩০ বছর
মূল স্কিল: রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারা, ঔষধ ও চিকিৎসা প্রযুক্তি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখা
বিশেষ স্কিল: সেবার মানসিকতা থাকা, যোগাযোগের দক্ষতা, ধৈর্য

স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের পেশা সম্পর্কিত প্রশ্ন

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট কোথায় কাজ করেন?

  • সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল
  • স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও থেরাপি সেন্টার
  • এনজিও
  • বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষায়িত স্কুল

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের কাজ কী?

  • স্বাস্থ্যজনিত কারণে (যেমন, শারীরিক গঠনগত ও স্নায়বিক) কোন ব্যক্তি সঠিকভাবে কথা বলতে না পারলে সমস্যার ধরন ও কারণ নির্ণয় করা
  • সমস্যার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া
  • নির্দিষ্ট সময় পরপর রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজনে চিকিৎসা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা

রোগীর সমস্যার ভিত্তিতে একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টকে কয়েক ধরনের সেবা নিশ্চিত করতে হয়। যেমন:

  • রোগীর অটিজম কিংবা মানসিক সমস্যা থাকলে যথাযথ কাউন্সেলিং দেয়া
  • শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের ভাবের আদান-প্রদানের বিকল্প মাধ্যম হিসাবে প্রতীকী ভাষা শেখানো
  • সেরিব্রাল পলসি, ঠোঁট-তালু কাটা, তোতলামি, স্ট্রোক, সিজোফ্রেনিয়া, আলঝেইমার, ডিমেনশিয়া, মেনিনজাইটিস ও পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেরাপির মাধ্যমে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে সাহায্য করা
  • শ্রবণ-বাক-বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষা গ্রহণ ও সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করা

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হতে হলে আপনাকে এ বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিতে হবে। পড়াশোনা শেষে এক বছর ইন্টার্নশিপ করা আবশ্যক।

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

এ পেশায় বেশ কিছু বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান থাকা জরুরি। যেমন:

  • ধ্বনিতত্ত্ব
  • নিউরোলজি
  • মনোবিজ্ঞান
  • প্রতীকী ভাষা

এর বাইরে দরকার হবে:

  • সেবার মানসিকতা
  • জটিল পরিস্থিতি সামলানোর দক্ষতা
  • পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা
  • ধৈর্য
  • যোগাযোগের দক্ষতা
  • গবেষণার দক্ষতা

কোথায় পড়বেন স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি?

সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড (CRP) পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইন্সটিটিউট (BHPI) ২০০৪ সাল থেকে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিতে ৫ বছর মেয়াদি বিএসসি ডিগ্রি দিয়ে আসছে। এতে শেষ এক বছর ইন্টার্নশিপ করতে হয়। এ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস (BUP) অধিভুক্ত বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান প্রয়াস ইন্সটিটিউট অফ স্পেশাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (PISER) থেকে অডিওলজি অ্যান্ড স্পিচ ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিতে এক বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা, ২ বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর ও ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডারস বিভাগ থেকে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়া সম্ভব।

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের কাজের ক্ষেত্র এবং সুযোগ কেমন?

বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য মতে, বাংলাদেশের প্রায় ২.৫ মিলিয়ন প্রতিবন্ধীর মধ্যে শতকরা ২৮ ভাগ বাক ও শ্রবণজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। সে অনুযায়ী দেশে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের সংখ্যা অনেক কম।

সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্য প্যারালাইজড (CRP) বা সিআরপির ৬ টি শাখাতেই স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টদের জন্য আকর্ষণীয় ক্যারিয়ার গড়বার সুযোগ আছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের (সাবেক পিজি হাসপাতাল) স্পিচ থেরাপি সেন্টার, অ্যাপোলো হাসপাতালের চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও ফিজিকাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার, ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে স্পিচ থেরাপিস্ট নিয়োগ দেয়া হয়।

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ৭৩টি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে স্পিচ থেরাপিস্টের পদ রয়েছে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের জন্য সেনাবাহিনীর বিশেষায়িত স্কুল প্রয়াসসহ আরো অসংখ্য বেসরকারি স্পেশাল চিলড্রেন স্কুল ও অটিজম কেয়ার সেন্টারে স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টরা কাজ করেন।

আপনি চাইলে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা এনজিওগুলোতে (যেমন: হ্যান্ডিক্যাপ বাংলাদেশ, ফেইথ বাংলাদেশ, প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি, সেন্টার ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ইন ডেভেলপমেন্ট) ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের মাসিক আয় কেমন?

স্পিচ থেরাপিস্ট হিসাবে মাসিক উপার্জন নির্ভর করে কর্মক্ষেত্রের উপর। সিআরপি, বিএসএমএমউ কিংবা বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যোগ্যতা অনুযায়ী বেশ ভালো পরিমাণের বেতন পাওয়া সম্ভব। অভিজ্ঞতা থাকলে এনজিও কিংবা স্পেশাল চাইল্ড স্কুলগুলোতে মাসিক ৳৪০,০০০ – ৳৫০,০০০ বেতন দেয়া হয়।

একজন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

আপনার ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় আপনি স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করবেন। সেটা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হোক, বা প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে হোক। চাইলে এ বিষয়ের উপর শিক্ষকতা করারও সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে উচ্চপদে কিংবা কনসালট্যান্ট হিসাবে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব।

Leave a Comment