হল্যান্ড থিওরি কী?

সঠিক ক্যারিয়ার বা শিক্ষার ধারা নির্ধারণ করা কর্ম বা ছাত্রজীবনকে সাফল্যমণ্ডিত আর সন্তুষ্টপূর্ণ করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।

অনেক সাইকোলজিস্ট বা মনোবিজ্ঞানী ধারণা করেন, “আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে কী কী কাজ করে থাকেন?” এ প্রশ্নের উত্তরের উপরেই আসলে আপনার কর্মজীবনের সফলতা নির্ভর করে। হল্যান্ড থিওরি (Holland Theory) এ বিষয়ের উপর সর্বাধিক পরিচিত ও পরীক্ষিত তত্ত্ব। সারা বিশ্বে বহু পেশার মানুষ এটি ব্যবহার করেন। ক্যারিয়ার বাছাইয়ের জন্য প্রায় ৩.৫ কোটি মানুষ ২৫টিরও বেশি ভাষায় এ তত্ত্বের সাহায্য নিয়েছে।

গত পঞ্চাশের দশকে আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী জন লুইস হল্যান্ড মানুষের ব্যক্তিত্ব ও কাজের পরিবেশের সাথে মানুষের ক্যারিয়ার উন্নয়নের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। হল্যান্ড থিওরি তারই ফসল। সঠিকভাবে এটি বুঝতে পারলে আপনি সহজে ক্যারিয়ার আর শিক্ষা নির্ধারণ করতে পারবেন, যা আপনার জীবনে সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

এক নজরে হল্যান্ড থিওরি

১. বেশিরভাগ মানুষের ব্যক্তিত্বকে ছয়টি প্রধান ধরনে ভাগ করা যায়। এগুলো হলোঃ

  • বাস্তববাদী (Realistic) – R
  • অনুসন্ধানী (Investigative) – I
  • শিল্পী (Artistic) – A
  • সামাজিক (Social) – S
  • উদ্যমী (Enterprising) – E
  • গতানুগতিক (Conventional) – C

এ ব্যক্তিত্বগুলোকে একত্রে হল্যান্ড কোড (Holland Code) বলা হয়ে থাকে। সংক্ষেপে রিয়াসেকও (RIASEC) বলে থাকেন অনেকে।

২. একই ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ একসাথে কাজ করলে এমন একটি কর্ম পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যা তাদের ব্যক্তিত্বের জন্যে উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ, যখন শিল্পকর্মীরা একসঙ্গে কাজ করেন, তখন তারা সৃজনশীল চিন্তা ও আচরণের জন্য উপযোগী অর্থাৎ একটি শৈল্পিক পরিবেশ তৈরি করেন।

৩. ছয়টি ব্যাক্তিত্বের জন্য ছয়টি মৌলিক ধরনের কাজের পরিবেশ রয়েছে: বাস্তবসম্মত,অনুসন্ধানমুলক, শৈল্পিক, সামাজিক, উদ্যমী এবং গতানুগতিক।

৪. মানুষ এমন কাজের পরিবেশ খোঁজে যেখানে তারা তাদের দক্ষতা ব্যবহার করতে পারবে ও তাদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করতে পারবে। উদাহরণস্বরূপ, অনুসন্ধানী ব্যক্তিরা অনুসন্ধানমূলক পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

৫. ব্যক্তিত্বের ধরন অনুযায়ী কর্ম পরিবেশে কাজ করতে পছন্দ করবেন বলে যারা সিদ্ধান্ত নেন, তারা কর্মজীবনে সফল ও সন্তুষ্ট হতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিল্পী ব্যক্তিত্বের মানুষ যদি শৈল্পিক কোন পরিবেশে কাজ করেন, তাহলে তার সাফল্য আর সন্তুষ্টি অর্জনের সম্ভাবনা বেশি।

৬. আপনার কাজের ধরন আর অনুভূতি আপনার কর্মস্থল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। যদি আপনি আপনার ব্যক্তিত্বের উপযোগী মানুষদের সাথে কাজ করেন, তাহলে তাদের কর্মগুণ আপনি অনেকটাই গ্রহণ করতে পারবেন। এতে আপনি সন্তুষ্ট বোধ করবেন।

পরবর্তী ধাপ: আপনার ব্যক্তিত্ব উপযোগী পরিবেশ নির্বাচন করুন

আপনার ব্যক্তিত্বের উপযোগী কর্মক্ষেত্র অথবা শিক্ষা প্রোগ্রাম আপনাকে সফলতা আর সন্তুষ্টির পথে নিয়ে যায়। এটিকে বলা হয় “Congruent” যার অর্থ উপযোগিতা বা মিল।

যেমন, আমরা কল্পনা করে নিই যে, আপনি ক্যারিয়ারকী সাইকোমেট্রিক টেস্টে ‘বাস্তববাদী’ ব্যক্তি হিসেবে সবচেয়ে বেশি স্কোর পেয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনার জন্যে সবচেয়ে ভালো পেশা হবে বাস্তবসম্মত পেশা বা সেরকম পরিবেশ। যেমনঃ পাইলট কিংবা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের পেশা!

ব্যক্তিত্বের ধরন অনুযায়ী বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে, সে ব্যাপারে পরের পর্বে আলোচনা করবো আমরা।

Leave a Comment