ক্রিকেট কোচ

বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনার শেষ নেই। ক্রিকেট খেলায় ক্যারিয়ার গড়তে চান এমন মানুষের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। তবে শারীরিক কোন প্রতিবন্ধকতা অবশ্য অন্য কোন সমস্যার কারণে অনেকের পক্ষেই ক্রিকেটার হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে ক্রিকেট নিয়ে কাজ করতে চান এমন মানুষদের জন্য সবসময়ই ক্রিকেট কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পথ খোলা থাকে।

এক নজরে একজন ক্রিকেট কোচ

সাধারণ পদবী: ক্রিকেট কোচ (DBA)
বিভাগ: শরীরচর্চা ও খেলাধুলা
প্রতিষ্ঠানের ধরন:সরকারি, প্রাইভেট ফার্ম/কোম্পানি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম, চুক্তিভিত্তিক
লেভেল: মিড
অভিজ্ঞতা সীমা: ২ – ৩ বছর
বেতনসীমা: ৳১৫,০০০ – ৳৩০,০০০
সম্ভাব্য বয়সসীমা: ৩৫ – ৪০ বছর
মূল স্কিল: ক্রিকেট খেলায় দক্ষতা, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা
বিশেষ স্কিল: সময় ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগের দক্ষতা, অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা

একজন ক্রিকেট কোচ কোথায় কাজ করেন?

ক্রিকেট কোচ হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনি সাধারণত নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পেতে পারেন –

  • বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(BKSP);
  • বিভিন্ন বেসরকারি ক্রিকেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান;
  • ক্রিকেট ক্লাব;
  • প্রাথমিক ধাপ থেকে কাজ করে এমন ক্রিকেট প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান।

প্রতিষ্ঠানভেদে কাজের চাপ ও কাজের ধরন একেকরকম হতে পারে। তবে সাধারণত বিকেএসপিতে কোচ হিসেবে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী থাকেন এই ইন্ডাস্ট্রিতে যারা কাজ করতে চান তারা।

একজন ক্রিকেট কোচ কী ধরনের কাজ করেন?

কোচ হিসেবে নিয়োগ পেলে আপনাকে সাধারণত প্রশিক্ষণের সবরকম ব্যাপার দেখাশোনা করা লাগে। এক্ষেত্রে একজন ক্রিকেট কোচের আওতায় পড়ে এমন কিছু কাজ হল –

  • যাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাদের একটি দৈনিক বা সাপ্তাহিক ডায়েট ঠিক করে দেওয়া;
  • একজন শিক্ষার্থী যে ধরনের কাজ করতে চায় তাকে সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা দেওয়া এবং বিভিন্ন টেকনিক শেখানো। যেমন – কেউ যদি ফাস্ট বোলার হয় সেক্ষেত্রে একজন ক্রিকেট কোচের কাজ হবে তাকে ফাস্ট বোলিং এর বিভিন্ন টেকনিক শেখানো। এক্ষেত্রে টেকনিক বলতে বল নিয়ে কী ধরনের কারিগরি দেখানো যায় সে ব্যাপারটির কথা বলা হচ্ছে;
  • আপনি যদি একজন ক্রিকেট কোচ হন সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র বোলিং বা ব্যাটিং টেকনিক শেখানোর মাধ্যমেই আপনার দায়িত্ব শেষ নয়। যেহেতু একজন বোলার বা ব্যাটসম্যানকে পেশাদার ক্রিকেটে বেশ ব্যস্ত সময়সূচী ও পরিশ্রমের উপরে থাকতে হয়, তাই তার শরীরের উপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে যেসকল টেকনিক বা পদ্ধতি ব্যবহার করলে সাধারণ ইনজুরি বা শারীরিক সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় সেগুলো জানা এবং শিক্ষা দেওয়া একজন ক্রিকেট কোচের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে;
  • মনে রাখতে হবে যারা ক্রিকেট কোচের কাছে প্রশিক্ষণ নিতে আসেন তাদের অধিকাংশই একদিন জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন নিয়ে আসে। এক্ষেত্রে সবার আশা পূরণ না হলেও একজন ক্রিকেট কোচের নৈতিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে তার শিক্ষা দেওয়ায় যাতে কোন ঘাটতি না থাকে;
  • ক্রিকেট বিষয়ক বিভিন্ন ট্যাকটিকস বা কৌশল, ফিল্ডিং সাজানো, বলের গতিবিধি বোঝা, ব্যাটিং স্টান্স, পিঞ্চ হিটিংসহ বিশেষ কিছু ক্রিকেটিয় জ্ঞান শিক্ষার্থীদের জানানো একজন ক্রিকেট কোচের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে;
  • টিম মেন্টালিটি এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক সামর্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্কিল বাড়ানো।

একজন ক্রিকেট কোচ কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

১। ন্যূনতম যে কোন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী
২। সংশ্লিষ্ট বিষয় তথা ক্রিকেট কোচিং-এ ডিপ্লোমা ডিগ্রী
৩। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড থেকে ক্রিকেট কোচ তৈরি করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে কোচিং এর লাইসেন্স বা ডিগ্রী থাকলে প্রার্থীরা অগ্রগণ্য হন
৪। কিছু ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ডিগ্রী প্রয়োজন হয় না। সেক্ষেত্রে পাঁচটি বিষয় প্রযোজ্য –
ক) জাতীয় দলের সাবেক বা বর্তমান খেলোয়াড় হতে হবে
খ) জাতীয় দলের প্রশিক্ষক
গ) কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে কোচিং বিষয়ে ডিগ্রীপ্রাপ্ত
ঘ) কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ক্রিকেট প্রশিক্ষণে ৫ বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন
ঙ) আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদকপ্রাপ্ত
চ) আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত কোন কোচিং কোর্সে সার্টিফিকেট বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত
৫। বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৪০ বছর
৬। এক্ষেত্রে সাধারণত নারীদের প্রশিক্ষণের জন্য নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এবং পুরুষদের প্রশিক্ষণের জন্য পুরষ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

একজন ক্রিকেট কোচের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • ক্রিকেট বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক;
  • এক্ষেত্রে সাফল্য পুরোটাই নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত অভিপ্রায় এবং দক্ষতার উপর। তাই প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আপনি যত রকম টেকনিক ও কৌশল শেখাতে পারবেন সেটাই আপনার জন্য বড় বিষয়। যারা সাধারণত কৌশলগতভাবে ভালো হন তাদের জন্য পরবর্তীতে ক্যারিয়ার এগোনোর পথ খুলে যায়;
  • ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে ফুটওয়ার্ক ও কীভাবে দুসরা, গুগলি বা রিভার্স সুইং জাতীয় বলগুলো মোকাবেলা করতে হবে সে ব্যাপারে গভীর ধারণা থাকতে হবে;
  • বোলার প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কীভাবে বল ধরতে হবে, দুসরা, গুগলি, রিভার্স সুইং ডেলিভারী দেওয়া যায় সেগুলো জানতে হবে;
  • স্লগ শেখানোর জন্য বর্তমানে ক্রিকেটে বিশেষ করে টিটোয়েন্টি ক্রিকেটে জোর দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে স্লগিং এর ব্যাপারে সম্যক জ্ঞান থাকা আপনার জন্য বেশ সুবিধাজনক হতে পারে।

একজন ক্রিকেট কোচের মাসিক আয় কেমন?

বিকেএসপি’র ক্ষেত্রে একজন ক্রিকেট কোচকে সাধারণত ৯ম পে স্কেল অনুসারে নিয়োগের শুরুতে মাসিক ২২০০০ টাকা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বার্ষিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধির ব্যাপারটি উল্লেখযোগ্য। অস্থায়ী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিকেএসপি একজন ক্রিকেট কোচকে সর্বসাকুল্যে মাসিক ৩৫০০০ টাকা সম্মানী প্রদান করে থাকে। এছাড়া অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে একজন ক্রিকেট কোচকে সাধারণত মাসিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মত সম্মানী দেওয়া হয়।

একজন ক্রিকেট কোচের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

ক্রিকেট কোচ নিয়োগের পরে তার ক্যারিয়ারের গ্রাফ পুরোপুরি তার নাম, যশ, কৌশল ও খ্যাতির উপর নির্ভরশীল। যদি আপনি বেশ কয়েকজন ভালো ক্রিকেটার তৈরি করতে পারেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে আপনার কৌশল বেশ কাজে দেয় সেক্ষেত্রে আপনাকে জাতীয় দল কিংবা জাতীয় লীগের কোন দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। বিকেএসপিতে খেলোয়াড় তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনার বিশেষ ভূমিকা থাকলে এবং আপনার বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী যদি জাতীয় দল বা জাতীয় লীগে খেলার সুযোগ পায় সেক্ষেত্রে আপনার জন্য লীগের দলগুলো এবং জাতীয় দলগুলোর চাহিদা তৈরি হবে। সাধারণত বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ক্রিকেট কোচ টেস্ট স্ট্যাটাসপ্রাপ্ত কোন জাতীয় দলে কোচিং করানোর সুযোগ পাননি। তবে আপনার কৌশল ভালো হলে চীন বা আর্জেন্টিনার মত আইসিসি’র যারা সহযোগী সদস্য দেশ আছে তাদের কোচিং এর দায়িত্ব আপনি পেতে পারেন।

বিশেষ কৃতজ্ঞতা

সালমান দিদার আজমী, ক্রিকেটার – সাগর একাদশ, স্পন্দন ক্রিকেট ক্লাব, দ্বীপ্ত একাদশ, আজাদ স্পোর্টিং, ফ্ল্যাশ ক্রিকেট ক্লাব (ক্লাবগুলোর সবগুলোই উত্তরবঙ্গ জোনের)

Leave a Comment