পরিসংখ্যানবিদ

একজন পরিসংখ্যানবিদ বা স্ট্যাটিস্টিশিয়ান বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তকে গাণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ব্যবহার উপযোগী করে তোলেন। শিক্ষা থেকে শুরু করে বড় বড় শিল্প – সব ক্ষেত্রেই এ পেশার চাহিদা রয়েছে। সংখ্যা নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে বাস্তব সমস্যার সমাধান করতে চাইলে আপনি কাজ করতে পারেন একজন পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে।

এক নজরে একজন পরিসংখ্যানবিদ

সাধারণ পদবী: পরিসংখ্যানবিদ, স্ট্যাটিস্টিশিয়ান
বিভাগ: গবেষণাভিত্তিক ক্যারিয়ার
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি, বেসরকারি, প্রাইভেট ফার্ম, কোম্পানি, ফ্রিল্যান্সিং
পেশার ধরন: ফুল-টাইম
লেভেল: এন্ট্রি, মিড
এন্ট্রি লেভেলে অভিজ্ঞতা সীমা: ০ – ২ বছর
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য গড় বেতন সীমা: ৳১৫,০০০ – ৳২০,০০০
এন্ট্রি লেভেলে সম্ভাব্য বয়স সীমা: ২৪ বছর – কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ
মূল স্কিল: গাণিতিক জ্ঞান, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা
বিশেষ স্কিল: গবেষণার দক্ষতা, যোগাযোগের দক্ষতা

একজন পরিসংখ্যানবিদ কোথায় কাজ করেন?

আমাদের দেশে মূলত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে যোগদানের সুযোগ রয়েছে।

  • সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে, যেমনঃ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS), বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BIDS)
  • বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেমনঃ ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (ICDDR,B), সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (CPD)

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও প্রাইভেট ফার্ম ও কোম্পানিগুলোতে পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে কাজ করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ব্যবস্থা রয়েছে।

একজন পরিসংখ্যানবিদের কাজ কী?

  • তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরীক্ষা ও জরিপের প্রশ্ন তৈরি করা
  • তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পরীক্ষা ও জরিপের সামগ্রিক পরিকল্পনা বানানো
  • তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পরিকল্পিত পরীক্ষা ও জরিপ আইনসম্মত ও নৈতিক কি না, তা খতিয়ে দেখা
  • পরীক্ষা ও জরিপ চালিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা
  • সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তার গতি-প্রকৃতি নির্ণয় করা
  • তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফলে গাণিতিক কোন ভুল আছে কি না, তা পরীক্ষা করা
  • ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা
  • প্রাপ্ত ফলাফলকে কীভাবে বাস্তব সমস্যার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দেয়া
  • তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের প্রক্রিয়াকে কীভাবে আরো মানসম্মত করা যায়, তার উপর গবেষণা করা

একজন পরিসংখ্যানবিদের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শিক্ষাগত যোগ্যতা: সাধারণত পরিসংখ্যান, গণিত বা অর্থনীতিতে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হয়।

বয়স: প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষে বয়সের সীমা নির্ধারিত হয়। সাধারণত আপনার বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে।

অভিজ্ঞতা: এ পেশায় অভিজ্ঞদের প্রাধান্য রয়েছে। সাধারণত ১-২ বছরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে।

একজন পরিসংখ্যানবিদের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

একজন পরিসংখ্যানবিদ হিসাবে কাজ করার প্রথম শর্ত হচ্ছে ভালো গাণিতিক জ্ঞান থাকা। এর সাথে নিচের দক্ষতাগুলো থাকা জরুরি:

  • কোন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তকে চিহ্নিত করতে পারা
  • তথ্য-উপাত্তকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে যথাসম্ভব নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা
  • পরিসংখ্যানে দক্ষতা
  • কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্তের মডেল তৈরি করতে পারা
  • গবেষণার ফলাফলের উপর গোছানোভাবে প্রতিবেদন লেখার ক্ষমতা

ডাটা বিশ্লেষণে ব্যবহৃত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা থাকলে বর্তমানে যেকোন প্রতিষ্ঠানে অগ্রাধিকার পাবেন। যেমন:

  • R
  • Python
  • SQL
  • Java

দক্ষভাবে কাজ করতে আপনাকে আরো কয়েকটি বিষয়ে ভালো হতে হবে। যেমন:

  • খুঁটিনাটি বিষয়ে মনোযোগ দেয়া
  • বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারা
  • রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতির উপর পরিষ্কার ধারণা রাখা
  • দলগত কাজ করতে পারা
  • সমস্যা সমাধানে দক্ষতা
  • পরিসংখ্যানের ব্যাপারে ধারণা কম, এমন মানুষের কাছে তথ্য-উপাত্ত আকর্ষণীয়ভাবে পরিবেশন করতে পারা

কোথায় পড়বেন পরিসংখ্যান বা স্ট্যাটিস্টিকস নিয়ে?

বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিগ্রি কলেজে পরিসংখ্যান নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া গণিত নিয়ে পড়েও এ পেশায় আপনি সহজে যোগ দিতে পারেন।

একজন পরিসংখ্যানবিদের মাসিক আয় কেমন?

প্রাথমিকভাবে একজন ট্রেইনি পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলে মাসিক ৳১৫,০০০ থেকে ৳২০,০০০ উপার্জনের সুযোগ আছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কাজের দক্ষতার ভিত্তিতে এ পেশায় মাসিক আয়ের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।

একজন পরিসংখ্যানবিদের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর অধীনে প্রতি বছর এন্ট্রি লেভেলে থানা পরিসংখ্যানবিদ নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া পরিসংখ্যান সহকারী বা তদন্তকারী পদে কাজ করতে পারেন। কাজ ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হবে আপনার।

শিক্ষক, ডেটা অ্যানালিটিক্স প্রফেশনাল, মার্কেট অ্যানালিস্ট, কনসালট্যান্ট – বিভিন্ন ধরনের পদে একজন পরিসংখ্যানবিদ যোগদান করতে পারেন।

তথ্যসূত্র

  • ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডাইরিয়াল ডিজিজ রিসার্চ, বাংলাদেশ (ICDDR,B), বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ: ১৬ জানুয়ারি ২০১৮
  • ওয়েইক্সিং ইন্ডাস্ট্রিয়াল (বাংলাদেশ) কোম্পানি লিমিটেড, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখ: ২৩ এপ্রিল, ২০১৮, বিডিজবস ডট কম

1 thought on “পরিসংখ্যানবিদ”

Leave a Comment