বিসিএস কৃষি

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস(BCS) এর কৃষি ক্যাডার একটি পেশাগত ক্যাডার। এ ক্যাডারে কাজ করতে চাইলে কৃষি অথবা অন্যান্য নির্দিষ্ট বিষয়ে স্নাতক পাশ করতে হবে। এ ক্যাডারে কর্মরত কর্মকর্তাগণ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে সমন্বিত কৃষি সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের মাধ্যমে সকল শ্রেণীর কৃষকদের প্রযুক্তি জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ, ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণসহ মৃত্তিকা উন্নয়ন গবেষণা ইন্সটিটিউটে কৃষি বিষয়ক গবেষণা করেন।

এক নজরে একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তা

সাধারণ পদবী: কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা/জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা/প্রশিক্ষক / বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বিভাগ: বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস
প্রতিষ্ঠানের ধরন: সরকারি
ক্যারিয়ারের ধরন: ফুল টাইম
লেভেল: এন্ট্রি
অভিজ্ঞতা সীমা: প্রযোজ্য নয়
বেতনসীমা: জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড অনুযায়ী মূল বেতন ২২ হাজার টাকা। কর্মস্থল অনুযায়ী বাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য ভাতা মিলিয়ে মাসিক ৩৫-৩৭ হাজার টাকা
সম্ভাব্য বয়সসীমা: বিসিএস সার্কুলার যে মাসে দেওয়া হবে সে মাসের প্রথম দিন একজন প্রার্থীর বয়স ২১-৩০ এর মধ্যে হতে হবে। তবে মুক্তিযোদ্ধা সনদধারী ব্যক্তিদের সন্তান ও পৌত্র-পৌত্রীর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর
মূল স্কিল: কৃষি ও কৃষিকাজ সম্পর্কিত জ্ঞান, মাঠ পর্যায়ে কাজের দক্ষতা, কৃষি বিষয়ক গবেষণার দক্ষতা
বিশেষ স্কিল: আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার জ্ঞান, নেতৃত্ব দেবার গুণাবলী, কৃষি বিষয়ক পরিকল্পনা করার দক্ষতা

একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তা কোথায় কাজ করেন?

কর্মজীবনের শুরুতে একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে কাজ করেন। জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসে এবং একজন প্রশিক্ষক কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে কাজ করেন। এ সকল দপ্তর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধিনস্ত। এছাড়া বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাগণ মৃত্তিকা উন্নয়ন গবেষণা ইন্সটিটিউটে কাজ করেন। এটি কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রতিষ্ঠান।

এছাড়া কীটতত্ত্ববিদ, উদ্ভিদরোগতত্ত্ববিদ হিসেবে সরাসরি কৃষি সম্প্রসারণ সদর দপ্তরে কাজের সুযোগ আছে।

একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তা কী ধরনের কাজ করেন?

  • একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপজেলার কৃষকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান, সার বিতরণ, ফসলের নতুন জাতের প্রচলন, কীটনাশকের লাইসেন্স প্রদান, ফসলের রোগ-বালাই দমনের ব্যবস্থা, প্রযুক্তি বিষয়ক সহায়তা, মান সম্মত বীজ উৎপাদনে সহায়তা, কৃষি ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতা, কৃষি পণ্য বিপণনে সহায়তা, কৃষি পণ্যের মূল্য সংযোজনে সহযোগিতা, কৃষি পুনর্বাসনে সহায়তা, কৃষিতে ভর্তুকি ও উৎপাদনে সহায়তা , সেচ ব্যবস্থাপনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় সম্পর্কে উপদেশ প্রদান ও ইঁদুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনাসহ অন্যান্য কৃষি সম্প্রসারণ বিষয়ক কাজ করে থাকেন।
  • কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে একজন কৃষি ক্যাডার প্রশিক্ষক হিসেবে কৃষিতে ডিপ্লোমা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
  • একজন বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা যে কোন জাত ও প্রজাতির বীজের প্রত্যয়ন করেন। বীজের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরক্ষণ ও লেবেলিং মান অনুযায়ী হচ্ছে কিনা তার তদারকি করেন। বীজ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী কতৃক সরবরাহকৃত বীজ মানসম্মত কিনা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তা যাচাই করেন।
  • একজন মৃত্তিকা বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাটির খনিজ, অণুজীব ও রাসায়নিক গুণাগুণ বিশ্লেষণ করে ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, সেচ পরিকল্পনা, ফসল উৎপাদন পরিকল্পনা, ভূমির সক্ষমতা যাচাই ও উপযুক্ত ফসল ও সারের সুপারিশ সহ মাটি বিষয়ক অন্যান্য গবেষণা ও মতামত প্রদান করে থাকেন।
  • কৃষি তথ্য সার্ভিসে একজন কর্মকর্তা কৃষি বিষয়ক তথ্য, সমস্যা ও সমাধানের প্রচার ও প্রসারের জন্য বেতার, টেলিভিশন, ভিডিও চিত্র, প্রকাশনাসহ অন্যান্য প্রকল্পে কাজ করেন।

একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তার কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষা পাশের পর কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ বছর মেয়াদী যেকোন বিষয়ে ডিগ্রী থাকলেই বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডারের জন্য যোগ্য বিবেচিত হন। তবে শিক্ষাজীবনের যে কোন পর্যায়ে (মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক) একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ থাকলে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কৃষি ক্যাডার হিসেবে কাজ করতে চাইলে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। মৃত্তিকা উন্নয়ন গবেষণা ইন্সটিটিউটে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হতে চাইলে মৃত্তিকা,পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান অথবা কৃষিতে মৃত্তিকা বিজ্ঞান অথবা কৃষিতে কৃষি রসায়ন অথবা কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে। তবে স্নাতকে তৃতীয় বিভাগ থাকলে আবেদনের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তার কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

  • অবশ্যই পদের সাথে সম্পর্কিত ও প্রয়োজনীয় কৃষি বিষয়ক জ্ঞান
  • কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক প্রযুক্তি ও নতুন হাইব্রিড জাত সম্পর্কে জ্ঞান
  • মাঠ পর্যায়ে গিয়ে নমুনা সংগ্রহসহ কৃষিকাজের বাস্তব অবস্থা যাচাই করে প্রতিবেদন তৈরির দক্ষতা
  • কৃষি সংক্রান্ত যেকোন সমস্যার বাস্তব এবং বৈজ্ঞানিক সমাধান ও ব্যাখ্যা দেবার জ্ঞান
  • কৃষি সংক্রান্ত গবেষণা করবার দক্ষতা
  • দেশের কৃষিজ উৎপাদন, কৃষিকাজের অবস্থা, কৃষি বিষয়ক অর্থনীতি, উৎপাদন সহায়ক দ্রব্যের মূল্য সম্পর্কে ধারণা
  • কৃষি বিষয়ক প্রশাসনিক ও মাঠ পর্যায়ের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও তদারকিতে দক্ষতা

কোথায় পড়াশোনা করবেন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তা হতে চাইলে?

বাংলাদেশে ৪ টি পাবলিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে।

  • বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (BAU) – ময়মনসিংহ
  • শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়- গাজীপুর
  • সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

এছাড়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-দিনাজপুর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-গোপালগঞ্জ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে কৃষিতে স্নাতক পড়বার সুযোগ আছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদে কৃষিতে স্নাতকের পাশাপাশি মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞানেও স্নাতক পড়বার সুযোগ আছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গলোর মাঝে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস এগ্রিকালচার এন্ড টেকনোলজি(IUBAT), ঈশা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষিতে স্নাতক ডিগ্রি দেওয়া হয়।

একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তার মাসিক আয় কেমন?

কর্মজীবনের শুরুতে একজন কৃষি ক্যাডার জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর গ্রেড ৯ অনুযায়ী ৩২-৩৭ হাজার টাকা পান। এরপর উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে পদোন্নতি হলে যথাক্রমে গ্রেড ৬ ও ৫ অনুযায়ী বেতন হয়। কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ গ্রেড ৪, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক গ্রেড ৩, পরিচালক গ্রেড ২ ও মহাপরিচালক গ্রেড ১ অনুযায়ী বেতন পান।

একজন বিসিএস কৃষি কর্মকর্তার ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

একজন কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে যোগদানের পর পদোন্নতি পেয়ে মেট্রোপলিটান কৃষি অফিসার/অতিরিক্ত কৃষি অফিসার হন। এর পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার এবং এরপর জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশিক্ষণ অফিসার ও সদর দপ্তরের উপ-পরিচালক হন। একে একে পদোন্নতি পেতে থাকলে সদর দপ্তর/আঞ্চলিক কার্যালয়ে অতিরিক্ত পরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক হন এবং দক্ষতা, যোগ্যতা ও অন্যান্য গুণাবলী থাকলে ক্যারিয়ারের শীর্ষে মহাপরিচালক হবার সুযোগ পান।

এর পাশাপাশি কীটতত্ত্ববিদ, উদ্ভিদরোগতত্ত্ববিদ, সহকারি উদ্যানতত্ত্ববিদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে উদ্যানতত্ত্ববিদ, রসায়নবিদ, উদ্যানতত্ত্ববিশেষজ্ঞ, শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ, কীট নিয়ন্ত্রণ অফিসার হিসেবে কাজের পাশাপাশি কৃষি অধিদপ্তরের সকল উচ্চপদে যাবার সুযোগ আছে। কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করে উর্ধ্বতন প্রশিক্ষক, মুখ্য প্রশিক্ষক ও অধ্যক্ষ হবার সুযোগ থাকে। কৃষি প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, কৃষি তথ্য সার্ভিসের কর্মকর্তারাও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে বদলি ও উচ্চপদে কাজের সুযোগ পান।

মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটে একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা একে একে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদ পরিচালক হবার সুযোগ পান।

Leave a Comment