হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন

অন্যান্য সকল সমস্যার মত পাকস্থলি, পরিপাকতন্ত্র, পিত্তনালী, গল ব্লাডার ও যকৃতের সমস্যাও বাংলাদেশে বেশ জটিল হিসেবেই ধরা হয়। মানবদেহের এই দুই অংশের (একটি মূলত পাকস্থলি ও পরিপাকতন্ত্র এবং অন্যটি যকৃত) রোগগুলো সাধারণত দুই ধরনের চিকিৎসক নির্ণয় করেন – গ্যাস্ট্রোয়েন্টেরোলজিস্ট এবং হেপাটোলজিস্ট। সমস্যা নির্ণয় দুই ধরনের চিকিৎসকের মাধ্যমে সম্পন্ন হলেও মানবদেহের বড় এই দুই অংশের সার্জারি সাধারণত একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনই সম্পন্ন করেন এবং তিনি হলেন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন 

একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন কোথায় কাজ করেন?

সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন নিযুক্ত থাকেন। এটি চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত একটি অংশ হওয়ায় বেশ অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসাশাস্ত্রের বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের কর্মক্ষেত্র হতে পারে নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে –

১। যে কোন সরকারি ও জাতীয় হাসপাতাল।

২। পাকস্থলী, পরিপাকতন্ত্র এবং যকৃতের সমস্যার জন্য বিশেষায়িত সরকারি, বেসরকারি অথবা স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল বা ইন্সটিটিউট ও প্রতিষ্ঠান। যেমন – ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন, গ্যাস্ট্রো-লিভার হসপিটাল প্রভৃতি।

৩। যে কোন মেডিকেল কলেজ (সরকারি ও বেসরকারি উভয়)।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন কী ধরনের কাজ করেন?

হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে হবে –

১। পরিপাকতন্ত্র, প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় এবং গ্যাস্ট্রো অংশের কোন সমস্যা সাধারণত নির্ণয় করেন একজন গ্যাস্ট্রোয়েন্টেরলজিস্টসমস্যা নির্ণয়ের পরে সমাধানের জন্য যদি সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজন হয় তা সম্পন্ন করেন একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন।

২। লিভার বা যকৃতের সমস্যা নির্ণয় করেন সাধারণত একজন হেপাটোলজিস্ট। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় একজন গ্যাস্ট্রোয়েন্টেরলজিস্টও যকৃতের চিকিৎসা করে থাকেন। এক্ষেত্রে যকৃতের সমস্যা নির্ণয়ের পরে যদি যকৃতে কোন সার্জারি বা অপারেশনের প্রয়োজন হয় তা সম্পন্ন করেন একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন।

৩। বিলিয়ারি ট্র্যাক্ট এবং এর অন্তর্ভুক্ত গল ব্ল্যাডার অংশের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

৪। অ্যাপেনডিসাইটিসে আক্রান্ত হলে অ্যাপেনডিক্স অপসারণের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

৫। পাকস্থলির নিচের অংশের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে পাকস্থলির সমস্যার সমাধান করা লাগতে পারে সার্জারির মাধ্যমে।

৬। পিত্তনালী পুনর্গঠনের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

৭। অগ্ন্যাশয়ের কোন অংশ অপসারণ করতে হতে পারে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে।

৮। যকৃত প্রতিস্থাপন এবং প্রয়োজনে যকৃতের কিছু অংশ অপসারণ করতে হয় সার্জারি বা অপারেশনের মাধ্যমে।

৯। গল ব্লাডারে পাথর অপসারণের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।

১০। পিত্তনালী, গল ব্লাডার এবং যকৃতের টিউমার অপসারণের সার্জারি সম্পন্ন করতে হয়।  

একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

শুধুমাত্র এমবিবিএস ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হওয়া যায় না। বরং হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিষয়ের উপর বিশেষায়িত ডিগ্রি থাকলেই কেবলমাত্র আপনি হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিষয়ে এমএস, এফসিপিএস, এমসিপিএস অথবা ডিপ্লোমা ডিগ্রি থাকলে আপনি হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এ ধরনের এমবিবিএস পরবর্তী কোন ডিগ্রি ছাড়া হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিষয়ে বিশেষায়িত জ্ঞান অর্জন করা যায় না বিধায় এরকম কোন ডিগ্রি ছাড়া হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হিসেবে কোথাও নিয়োগ পাওয়া যায় না। নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত পূর্ব অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়অন্যান্য কর্মক্ষেত্রের মত এখানেও অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। নিয়োগের পরবর্তী জীবনে ক্যারিয়ার উন্নয়নের জন্য অভিজ্ঞতা চিকিৎসাশাস্ত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব সরাসরি অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান আহরণ করা জরুরি।

২। পিত্তনালী, পাকস্থলি, অগ্ন্যাশয় এবং যকৃত নিয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

৩। আল্ট্রাসনোগ্রামসহ পিত্তনালী, পাকস্থলি, অগ্ন্যাশয় এবং যকৃতের সমস্যা নির্ণয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিয়ে ভালোমত জানতে হবে এবং রিপোর্ট বোঝার মত যথাযথ জ্ঞান থাকতে হয়।   

গল ব্লাডারে পাথর এবং যকৃতের সমস্যার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতার ঝুঁকি না নেওয়া ভালো কারণ তা পরবর্তীতে বড় ও জটিল সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

সার্জারির কাজ বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অপারেশন সম্পন্ন করার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের মাসিক আয় কেমন?

আপনি যদি একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জন হন সেক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে মাসিক সম্মানীর পরিমাণ বাংলাদেশে বেশ ভালো। বেসরকারি ক্ষেত্রে শুরুর দিকে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৭০০০০ টাকা থেকেসময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে এক লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। বিষয়টি একেবারেই কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ীএক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে।

একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

যে কোন হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –

১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট

সিনিয়র কনসালট্যান্ট

এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্টসাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ধরনের হাসপাতালের জন্যই তা প্রযোজ্য।

মেডিকেল কলেজ, ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে। নিয়মিত পড়াশোনা করা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া একজন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জনের জন্য জরুরী।   

কোথায় পড়বেন হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি?

এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে বাংলাদেশে বিসিপিএস (বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস) থেকে হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিষয়ের উপর এফসিপিএস ডিগ্রি লাভ করা সম্ভব। এছাড়া কয়েকটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হেপাটোবিলিয়ারি সার্জারি বিষয়ের উপর এই গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রিগুলো, যেমন – ডিপ্লোমা, এমএস প্রভৃতি দেওয়া হয়ে থাকে।

 

Leave a Comment