ইএনটি বিশেষজ্ঞ: নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ

ঠান্ডা-কাশির সমস্যায় আক্রান্ত হননি এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। এসব বেশ সাধারণ সমস্যা ছাড়াও নাক, কান ও গলা সংক্রান্ত নানা রকম গুরুতর সমস্যার সমাধানের বিষয়টি দেখভাল করেন একজন নাক, কান ও গলা ডাক্তার বা ইএনটি বিশেষজ্ঞ। মেডিকেলের পরিভাষায় একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞকে অটোল্যারিনগোলজিস্ট বলা হয়।

একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ কোথায় কাজ করেন?

সরকারি পর্যায়ে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে টারশিয়ারি পর্যায়ের হাসপাতাল পর্যন্ত সব ধরনের হাসপাতালেই একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ কাজ করতে পারেন। সরকারি এবং বেসরকারি – দুই ধরনের হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানেই ইএনটি বিশেষজ্ঞ নিযুক্ত থাকেন। ইএনটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনি কাজ করতে পারবেন এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হল –

১। জাতীয় নাক, কান ও গলা ইন্সটিটিউট

২। উপজেলা, সদর, জাতীয় হাসপাতাল এবং সরকারি মেডিকেল কলেজ বা হাসপাতাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

৪। যে কোন বেসরকারি হাসপাতাল এবং নাক, কান ও গলার সমস্যার উপর বিশেষায়িত কোন প্রতিষ্ঠান। যেমন – বাংলাদেশ ইএনটি হাসপাতাল, ইএনটি অ্যান্ড হেড-নেক ক্যান্সার হসপিটাল অ্যান্ড ইন্সটিটিউট প্রভৃতি।

একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ কী ধরনের কাজ করেন?

ইএনটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে আপনাকে সাধারণত নিম্নলিখিত কাজগুলো করা লাগবে –

১। নাক, কান ও গলার সাধারণ সমস্যা সনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী প্রতিকার হিসেবে ওষুধ পরামর্শ দেওয়া।

টনসিলের সমস্যা সনাক্ত করা এবং প্রয়োজনে টনসিল অপসারণের সার্জারি বা অপারেশন সম্পন্ন করা।

গলার অভ্যন্তরীণ সমস্যার ক্ষেত্রে সার্জারি ও অপারেশন করতে হয়।

কানে কম শোনা, কানের ভারসাম্যহীনতা জনিত সমস্যা এবং জন্মগত কানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সমস্যা নির্ণয় করা এবং এর প্রতিকারের পরামর্শ দেওয়া।

নাক ডাকা, নাকের পলিপস ও নাক বন্ধ হওয়ার সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ।

মাইগ্রেনের সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন এবং এ ধরনের সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

৭। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সার্জারি বা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে তার সমাধান দেন একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞ।

৮। স্বরযন্ত্রের সমস্যা নির্ণয় করা এবং এর প্রতিকার দেওয়া।

একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়?

ইএনটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনাকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভের পরে এমএস, এফসিপিএস, ডিপ্লোমা, এমসিপিএস প্রভৃতি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতই নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞের ক্ষেত্রেও গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রি ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে পদোন্নতি হয় এবং উপরের পদগুলোতে প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়।

একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। অভিজ্ঞতা একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার অভিজ্ঞতার পরিমাণ বেশি হলে সাফল্য ও দক্ষতা দুটোই বৃদ্ধি পাবে।

টনসিলের সমস্যার ক্ষেত্রে যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সমস্যা গুরুতর হলে হয়তো সার্জারি করা লাগতে পারে এবং সার্জারির সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। টনসিল অপসারণের পূর্বে সমস্যা কতটুকু গুরুতর এবং আসলেই টনসিল অপসারণ করা জরুরি কিনা সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

হিয়ারিং টেস্ট এবং কানে কম শোনার সমস্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় প্রতিকারের ব্যাপারে ধারণা থাকতে হবে।

থাইরয়েডের সমস্যার সার্জারি বা অপারেশনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কাশি ও অন্যান্য প্রচলিত নাক, কান ও গলা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের বিষয়ে গভীর ধারণা থাকতে হবে এবং নিয়মিত জ্ঞান আহরণ করতে হবে।

চিকিৎসাশাস্ত্রে নতুন জ্ঞান নিয়মিত আহরণ করা জরুরি। ইএনটি বিষয়ে যে সকল নিয়মিত সমস্যা সনাক্তকরণ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও ওষুধের আগমন ঘটছে সে ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজখবর রাখতে হবে।

৭। স্বরযন্ত্র নিয়ে যথাযথ ধারণা থাকতে হবে।

একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের মাসিক আয় কেমন?

বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে ইএনটি বিশেষজ্ঞের মাসিক সম্মানী শুরু হয় প্রায় ৭০০০০ টাকা থেকে। সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে আপনার মাসিক আয় বেড়ে এক লাখ টাকা কিংবা তার অধিকও হতে পারে। অনেকেই থাইরয়েড ও টনসিলের সমস্যার জন্য অপারেশন বা সার্জারি করিয়ে থাকেনইএনটি বিশেষজ্ঞের মাসিক আয়ের পরিমাণও তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি হয়। তবে বিষয়টি কাজ ও প্রতিষ্ঠানসাপেক্ষ।

সরকারি কর্মক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী নির্দিষ্ট করা থাকবে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী। এক্ষেত্রে আপনার মাসিক সম্মানী শুরু হবে ৬ষ্ঠ স্কেল বা ৪৩০০০ টাকা থেকে। আপনি আলাদাভাবে নিজের চেম্বারে রোগী দেখার ব্যবস্থা রাখলে সেক্ষেত্রে আপনার মাসিক আয় আরও বেশি হবে যেহেতু নাক, কান ও গলার সমস্যা বাংলাদেশে অহরহ দেখা যায়। এছাড়া ঠান্ডা-কাশি ও অন্যান্য সমস্যাও বহুসংখ্যকবার দেখা যাওয়ায় ইএনটি বিশেষজ্ঞের কাজের পরিধি বেশ বড়।

একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

হাসপাতালের ক্ষেত্রে একজন ইএনটি বিশেষজ্ঞের ক্যারিয়ারের পদবিন্যাস সাধারণত নিম্নলিখিত পদগুলো অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে এগোয় –

১। জুনিয়র কনসালট্যান্ট

২। সিনিয়র কনসালট্যান্ট  

এক্ষেত্রে নিয়োগের পরে আপনার প্রথম পদ হবে জুনিয়র কনসালট্যান্টসাধারণত অল্প অভিজ্ঞতা আছে এবং অন্তত একটি ব্যাচেলর পরবর্তী ডিগ্রি আছে এমন ব্যক্তিদেরকে জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। জুনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। কিছু সময় অভিজ্ঞতা লাভের পরে এবং নতুন কোন উচ্চ শিক্ষার ডিগ্রি লাভের মাধ্যমে আপনি সিনিয়র কনসালট্যান্ট হিসেবে পদোন্নতি পাবেন।

মেডিকেল কলেজ, জাতীয় নাক, কান ও গলা ইন্সটিটিউট ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে কিংবা যে কোন জায়গায় শিক্ষকতার ক্ষেত্রে আপনার পদবিন্যাস সহকারী অধ্যাপক থেকে শুরু হয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ অধ্যাপক পর্যন্ত যেতে পারে।

কোথায় পড়বেন ইএনটি?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেশ কিছু সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজেও নাক, কান ও গলা বিষয়ের উপর গ্র্যাজুয়েশন পরবর্তী ডিগ্রি (যেমন – ডিপ্লোমা, এমএস, এমসিপিএস প্রভৃতি) প্রদান করা হয়। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় নাক, কান ও গলা ইন্সটিটিউট উল্লেখযোগ্য।

 

Leave a Comment