ফুটবল রেফারি

ফুটবল ম্যাচ পরিচালনার জন্য রেফারি ও লাইন্সম্যানদের নিয়োগ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ম্যাচে শৃঙ্খলাজনিত সবরকমের সমস্যা ও ম্যাচের কার্যনির্বাহ পরিচালনা করার দায়িত্ব ফুটবল রেফারির উপর অর্পিত থাকে।  লাইন্সম্যানরা রেফারিকে তাঁর কাজে সহায়তা করেন এবং ফুটবল ম্যাচ পরিচালনা করার কর্মক্ষেত্রে নিয়োজিত থাকলে আপনি রেফারি ও লাইন্সম্যান উভয় হিসেবেই কাজ করতে পারেন

একজন ফুটবল রেফারি কোথায় কাজ করেন? 

ফুটবলরেফারি হিসেবে কাজ করতে চাইলে আপনি সাধারণত নিম্নলিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ পেতে পারেন –

১। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)

২। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান(BKSP)

জেলা ক্রীড়া সংস্থা

প্রতিষ্ঠানভেদে কাজের চাপ ও কাজের ধরন একেকরকম হতে পারে। তবেরেফারি হিসেবে কাজ করতে চাইলে সাধারণত বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে আপনাকে।

একজন ফুটবল রেফারি কী ধরনের কাজ করেন?

ফুটবল রেফারি হিসেবে নিয়োগ পেলে আপনার আওতায় পড়বে এমন কিছু কাজ হল –

১। ফুটবল ম্যাচে একজন রেফারির সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। আপনার অবস্থান থেকে দূরবর্তী ঘটনা অবলোকন ও নিরীক্ষণের জন্য বিভিন্ন জায়গায় লাইন্সম্যান অবস্থান করেন। সেক্ষেত্রে আপনার সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে আপনি লাইন্সম্যানদের সাথে কথা বলে এবং আলোচনা করে অল্প সময়ের মধ্যে আপনার সিদ্ধান্ত জানাবেন।

২।রেফারি হিসেবে আপনাকে নিয়োগ দেওয়া হলেও এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে খেলার নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ম্যাচ পরিচালনার জন্য লাইন্সম্যানরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই লাইন্সম্যান ও রেফারি পদগুলোর ক্ষেত্রে আলাদা কোন বিন্যাস করা হয় না। কিছু ম্যাচে আপনাকে লাইন্সম্যান হিসেবে কাজ করতে হতে পারে আবার কিছু ম্যাচে আপনাকে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।

৩। ক্ষেত্রবিশেষ ব্যতীত লাইন্সম্যানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হিসেবে গণ্য হয় না। তাই একজনরেফারির উপরেই সাধারণত ম্যাচ পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব অর্পিত থাকে। যেমন – অফসাইডের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে লাইন্সম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হয়। সেখানে ম্যাচরেফারি অফসাইডের লাইনে অবস্থান করেন না বলে অফসাইডের ব্যাপারে তার কোন এখতিয়ার নেই।

৪। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য এবং ম্যাচে ফাউল বা বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে ইচ্ছাকৃতভাবে অবৈধ উপায়ে আটকানোর ক্ষেত্রেরেফারিকে হলুদ কার্ডের মাধ্যমে ফাউলকারী খেলোয়াড়কে সতর্ক এবং লাল কার্ডের মাধ্যমে ম্যাচ ও মাঠ থেকে বহিষ্কার করতে হয়।

৫। মাঠে বাকবিতন্ডা ও মারামারি জাতীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত ঘটনায় খেলোয়াড়দের জন্য শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত দিতে হয়রেফারিকে।

৬। গোল হয়েছে কি হয়নি – সেই সিদ্ধান্ত দিতে হয়রেফারিকে। এক্ষেত্রে লাইন্সম্যানদের সাথে চাইলেরেফারি আলোচনা করে নিতে পারেন।

৭। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ গুরুতর হলে সংশ্লিষ্ট ফুটবল ফেডারেশন এবং উচ্চ কর্তৃপক্ষকে সে ব্যাপারে জানানোর দায়িত্ব একজন ফুটবলরেফারির এবং এক্ষেত্রে শাস্তি সুপারিশ করার সুযোগও আপনার হাতে থাকবে।

৮। বাঁশি বাজানোর মাধ্যমে এবং সংকেত দেখানোর মাধ্যমেরেফারিকে ম্যাচ পরিচালনা করতে হয়। এক্ষেত্রে ম্যাচ শুরুর সংকেত, অর্ধ শেষ হওয়ার সংকেত, ম্যাচ শেষ হওয়ার সংকেতসহ প্রতিটি ফাউল এবং অফসাইডের সময় বাঁশি বাজানোর মাধ্যমে খেলোয়াড়দেরকে খেলা সাময়িক থামানোর জন্য অবহিত করতে হবে আপনাকে। ম্যাচের জন্য অতিরিক্ত বরাদ্দকৃত সময় নির্ধারণ করার দায়িত্ব অবশ্য একজন লাইন্সম্যানের উপর অর্পিত থাকে।

৯। ফিফা প্রদত্ত নিয়ম-কানুন অনুযায়ী আপনাকে ম্যাচ পরিচালনা করতে হবে। ম্যাচ শুরুর আগে টস ও দুই দলের অধিনায়কদের মধ্যে সৌহার্দ্যমূলক করমর্দন নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে।

একজন ফুটবল রেফারির কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হয়? 

ফুটবল রেফারি হিসেবে কাজ করতে চাইলে সাধারণত শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হয়। তবে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রিপ্রাপ্ত হলেই যে কেউ রেফারি হিসেবে কাজ করতে পারবেন না।রেফারি হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে। বাফুফে সাধারণত বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নতুন যারারেফারি হতে চান তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে এবং যারা প্রশিক্ষণ সফলভাবে সমাপ্ত করতে পারেন তাদেরকে একটি সার্টিফিকেট বা সনদ প্রদান করা হয়। এই সনদের মাধ্যমে ফুটবলরেফারি হিসেবে আপনি বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পান। লাইন্সম্যান ওরেফারি হওয়ার যোগ্যতা একই। আপনাকে কোন ম্যাচে লাইন্সম্যান আবার কোন ম্যাচে রেফারি হিসেবে নিযুক্ত করা হতে পারে। সব ম্যাচেই আপনাকে রেফারি হিসেবে নিযুক্ত করা হবে না। জাতীয় পর্যায়ে রেফারি হিসেবে কাজ করার জন্য এই সার্টিফিকেট যথেষ্ট হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করতে গেলে নতুন একটি উচ্চ সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় যা অন্য একটি প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে অর্জন করা যায়।

একজন ফুটবলরেফারির কী ধরনের দক্ষতা ও জ্ঞান থাকতে হয়?

১। ফুটবল বিষয়ে সম্যক জ্ঞান থাকা আবশ্যক

২। ফুটবলের নিয়ম-কানুন বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা থাকতে হবে।

৩। ফিফা প্রণোদিত নিয়মিত হালনাগাদ করা আইন-কানুন ও নতুন নিয়মাবলি নিয়ে জানতে হবে।

৪। ন্যায় ও সুষ্ঠু বিচারের ক্ষমতা থাকা একজন রেফারির জন্য বাধ্যতামূলক।রেফারিং ক্যারিয়ারে শুধুমাত্র অভিজ্ঞতা দিয়ে ভালো করা সম্ভব নয়। বরং আপনার সিদ্ধান্ত প্রদানের কার্যকারিতা ও যৌক্তিকতার উপর নির্ভর করবে আপনার ক্যারিয়ারের অগ্রগতি ও উন্নয়ন।

৫। ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্মিত ব্যাখ্যা যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে এবং ফিফা প্রদত্ত আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী নিজের সিদ্ধান্ত গঠন করতে হবে।

৬। খেলোয়াড়দের সাথে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে চলে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে।

৭। ফুটবল বেশ গতিশীল একটি খেলা হওয়ায় এখানে সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত দিতে হয়। তাই রেফারি হতে হলে আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এমন হতে হবে।

৮। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সময় কম ছিল এমন অজুহাতে ভুল বা কোন রকম একটি সিদ্ধান্ত না দিয়ে যথার্থ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হতে হবে।

৯। ক্যারিয়ার উন্নয়নের ক্ষেত্রে আপনার ব্যক্তিগত রেকর্ড খুব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার জন্য কুখ্যাতি বা দুর্নাম থাকলে তা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ক্ষতিকর।

 

একজন ফুটবল রেফারির ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?

ফুটবল রেফারি হিসেবে আপনার ক্যারিয়ারের উন্নয়ন নির্ভর করবে আপনার ব্যক্তিগত যশ ও খ্যাতির উপর যা নির্ধারিত হবে আপনার ক্যারিয়ারে প্রতি ম্যাচে প্রদত্ত সিদ্ধান্তগুলোর কার্যকারিতা ও যথার্থতার উপর ভিত্তি করে। প্রথমে স্থানীয় পর্যায়ে ফুটবল রেফারি হিসেবে আপনাকে ক্যারিয়ার শুরু করতে হবে। ধীরে ধীরে অভিজ্ঞতা ও রেকর্ড ভালো করার মাধ্যমে আপনি জাতীয় পর্যায়ে রেফারিং করার সুযোগ পাবেন। জাতীয় পর্যায়ে ভালো করলে বাফুফে আপনাকে প্রশিক্ষণ কোর্সের সুযোগ দিবে। সেখানে সার্টিফিকেট পাওয়ার মাধ্যমে আপনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রেফারি হিসেবে কাজ করতে পারবেন।

 

 

2 thoughts on “ফুটবল রেফারি”

Leave a Comment